শিক্ষকতায় মেধাবীদের আসতে দিন - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকতায় মেধাবীদের আসতে দিন

হাসিম উদ্দিন আহমেদ |

আপনি যদি প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, তারা ভবিষ্যতে কী হতে চায়, তাদের মধ্যে দু'একজন ছাড়া কেউই শিক্ষক হওয়ার কথা বলবে না। কেন তারা শিক্ষক হতে চায় না, এর পেছনে নিশ্চয়ই জোরালো কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ক্যারিয়ার নির্বাচনে শিক্ষকতা কখনোই আকর্ষণীয় পেশা ছিল না। এখনো তা হতে পারেনি!

সদ্য প্রকাশিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে মাত্র ১২ হাজার পদের বিপরীতে যখন ২৪ লাখের অধিক শিক্ষিত তরুণ চাকরির যুদ্ধে নামে, তখন প্রশ্ন আসে এই তরুণরা কি শিক্ষকতাকে বিন্দুমাত্র ভালোবেসে শিক্ষক হতে চায়?  নাকি নিজের বেকারত্ব ঘোচাতে, একটা চাকরির প্রয়োজনে শিক্ষক হওয়ার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে তারা ?

দ্বিতীয় কারণটিই যদি মুখ্য হয়, তাহলে তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বিরাট অশনিসংকেত। চাকরির বাজারে ঠেকায় পড়া তরুণদের মধ্যে সরকার যাদের শিক্ষক বানাচ্ছে, এদের অন্তঃকরণে যদি 'শিক্ষক'ই অনুপস্থিত থাকে, তাহলে এদের দ্বারা আর যাই হোক দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রত্যাশিত মানদণ্ডে দাঁড় করানো প্রায় অসম্ভব হবে। নিয়োগ দেয়ার পর এই শিক্ষকদের যতই রঙবেরঙের প্রশিক্ষণ দেয়া হোক না কেন,  স্কুলগুলোতে যতই আকর্ষণীয় প্রকল্প যেমন- উপবৃত্তি, বিস্কুট, মিড-ডে মিল, পোশাকভাতা ইত্যাদি চালু করা হোক, মানসম্পন্ন শিক্ষা কেবল আকাঙ্ক্ষার এক অধরা বিষয় হয়েই থাকবে।

প্রশ্ন আসে, সমস্যাটা তাহলে কোথায়? সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আমাদের সরকারের কাছে শিক্ষা, শিক্ষক এগুলো কখনোই খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারেনি। সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে যতটা মনযোগী, ততটা মনযোগ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে দেখায়নি। হ্যাঁ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিকীকরণের জন্য বড় বড় প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের ফিনান্সিয়াল পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, এগুলো অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু, এত কিছুর পর যদি মানসম্পন্ন শিক্ষক না দেয়া যায়, তাহলে এত মহাযজ্ঞের ফল কী হবে?

সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার জরিপ অনুযায়ী দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান মোটেও সন্তোষজনক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে, এমন বহু শিক্ষার্থীর অর্জিত শিক্ষার মান চরম হতাশাজনক বলে জরিপে উঠে এসেছে। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এই তথ্য মানতে নারাজ। তবে, কোনো তথ্যকে অস্বীকার করলেই তা অসত্য হয়ে যায় না।

স্কুল-কলেজের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেমেয়েরা যেদিন অন্যান্য আকর্ষণীয় পেশার সাথে যুগপৎ শিক্ষকতাকেও তাদের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়ার যৌক্তিকতা খুঁজে পাবে, সেদিন থেকে দেশের টোটাল শিক্ষাব্যবস্থাই পালটে যেতে থাকবে।

এটা মনে রাখা প্রয়োজন, সঠিক রোগ চিহ্নিতকরণ ছাড়া, দামি দামি সব ওষুধপাতি কিনলেই রোগ সারার সম্ভাবনা থাকে না। বরং ধীরে ধীরে মৃত্যুই অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে।

তাই, সরকারকে বলব শিক্ষা নিয়ে ভাবতে গেলে শিক্ষকের কথা বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা একটা শক্ত প্রতিবন্ধকতা। এটাকে মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে।

হাসিম উদ্দিন আহমেদ : শিক্ষক, ময়মনসিংহ।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.014567136764526