শিক্ষকের চোখে শেখ রাসেল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকের চোখে শেখ রাসেল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পৃথিবীর কোনো পঙ্কিলতাই যাকে স্পর্শ করেনি সেই শিশু রাসেলেরও প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ঘাতকের দল; ইতিহাসের নির্মম ট্রাজেডির শিকার রাসেল কেমন ছিল- তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তার একজন শিক্ষক।

শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের ওয়েব টিম আয়োজিত এক ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে রাসেলকে পড়ানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন গীতালি দাশগুপ্তা।

শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী রোববার। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রাসেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বর্বর ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারাতে হয় ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শিশু রাসেলকে।

শেখ রাসেলকে নিয়ে তার শিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, “শেখ রাসেলকে একবার যেটা শিখিয়েছি, তা সে কোনো দিন ভোলে নাই। অত্যন্ত মানব্কি ছিল সে।

“একইসঙ্গে মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল রাসেলের কচি মনে।”

সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, “আমার সামনে পরীক্ষা থাকায় শেখ রাসেলকে পড়াব না বলে আমি বলে দেই। এই কথা শুনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বললেন, ৩০ মিনিট? আমি বললাম, তাও সম্ভব না। তিনি আবার বললেন, ২০ মিনিট? আমি চুপ করে রইলাম, মানে ২০ মিনিটও সম্ভব না। তারপর তিনি আবারও বললেন, ১৫ মিনিট? তখন আমার কাছে মনে হল, একজন মা তার ছেলের জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় চাইছেন, এই সময়টুকু তো আমার দেওয়া উচিত। আমি চেঞ্জ হয়ে গেলাম।

“তারপর আমি কাকিমার (বঙ্গমাতার) দিকে তাকিয়ে বললাম, এই রাস্তায় কি বাস চলে? নইলে আমি যাতায়াত করব কীভাবে? আমার তখনো এই বোধটুকু নেই যে, আমি কাকে যাতায়াতের কথা বলছি। তখন বঙ্গমাতা বললেন, আপনি পড়াবেন? তাহলে যাতায়াতের ব্যবস্থাটুকু আমিই করব।”

এর পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে শেখ রাসেলের গৃহশিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, “শেখ রাসেলকে যেটা শিখিয়েছি সে তা কোনো দিন ভোলে নাই। শেখ রাসেল একবার বলে, আমি আর অংক করব না। আমি প্রশ্ন করলে বলে, আমার ইচ্ছে করে না। এরপর আমি চিন্তা করলাম, কীভাবে শেখানো যায়। বললাম যে, তুমি স্কুলে চকলেট নিয়ে যাও? সে বললো, হ্যাঁ। আমি বললাম, একা একা খাও তাই না? রাসেল বলল, নাহ, একা খাই না, বন্ধুদের দিয়ে খাই। তখন বললাম, এই যে তুমি দুইটা অংক রেখে দিলে, তারা কষ্ট পাবে না?

“রাসেল বলল, কেন কষ্ট পাবে? ওরা কী কথা বলতে পারে? খুব অবাক ও। আমি বললাম, এই যে আমাদের বাংলাদেশ আছে, তেমনই একটা অংকের দেশ আছে। তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলতে পারে। কষ্ট পেয়ে যাবে। এরপর রাসেল টপ টপ করে দুটো অংক করে বলে, এখন তো আর ওরা রাগ করবে না। এখন তো আর অংকের দুঃখ নাই।”

শেখ রাসেলকে নিয়ে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, “আমি তাকে স্বাধীনতার স্বপ্নের প্রতীকী শিশু হিসেবে দেখি। রাসেলের হাতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে একটি ছবি আছে, তা দেখলে আমার কাছে প্রতীকী অর্থে সে বড় হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই দেশাত্মবোধ ছিল তার মাঝে। একেবারে পরিবার থেকে পাওয়া।”

অভিনেতা ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শিশু রাসেল মায়ের কাছে যাবে বললে ওকে মায়ের কাছে নিয়ে তাকে হত্যা করে ঘাতকরা। এটি কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি কিন্তু পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। তারা জানত, তাকে যদি রেখে দেওয়া হয় তার মধ্যে তো শেখ মুজিবের রক্ত আছে, বঙ্গমাতার রক্ত আছে।”

আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, “আমরা জানি না শিশু রাসেল বড় হয়ে কী হত, কী করতে পারত। কিন্তু আমরা জানি তার পরিবার শুধু মানুষদের দিয়েই গেছে। এতেই বোঝা যায়, পরিবারের অন্যান্য সন্তানরা বেঁচে থাকলে কী দিতে পারতেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ বলেন, “শেখ রাসেল যেদিন জন্মগ্রহণ করল সেদিন শেখ রেহানার মতো আমার কাছেও মনে হয়েছে, আমারও ছোট্ট ভাই হয়েছে। রাসেলের কথা বলতে গেলে আমার ১৫ অগাস্টের কথা মনে পড়ে যায়।

“সেদিন কী ভয়ংকর রূপ ছিল! আমরা তো পাশেই ছিলাম। গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। ছোট্ট শিশুর মনের অবস্থা সেদিন কী হয়েছিল? আর যেই পাষণ্ডরা এই বাচ্চার বুকের ওপর গুলি চালাল, তারা কীভাবে পারল! তাদের কি একটুও মায়াদয়া হয়নি? একটুও হাত কাঁপেনি? একটুও বুক কাঁপেনি? আজকের দিনে এটুকু চাই, ও যেখানে থাকে যেন ভালো থাকে, ওর আত্মার শান্তি কামনা করছি।”

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0085902214050293