শিক্ষকের স্বাধীনভাবে পড়ানোর ক্ষমতা: ক্ষমতাবান হওয়া - Dainikshiksha

শিক্ষকের স্বাধীনভাবে পড়ানোর ক্ষমতা: ক্ষমতাবান হওয়া

মো. সিদ্দিকুর রহমান |
ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আক্তারুজ্জামানের সাথে প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহবায়ক মো. সিদ্দিকুর রহমান ও অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

৫ই অক্টোবর প্রতি বছরের মত এবারও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশে প্রায় সকল দিবস সরকারিভাবে পালিত হলেও শিক্ষকদের একমাত্র বিশ্ব শিক্ষক দিবস সরকারিভাবে পালন করা হয় না। গভীর ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে শিক্ষক সংগঠনগুলো ও কতিপয় এনজিও এ দিবস যথাযথভাবে পালন করতে যাচ্ছে। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের স্বাধীনভাবে পড়ানোর ক্ষমতা ও ক্ষমতাবান হওয়া প্রতিপাদ্য হিসেবে গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে। প্রতিপাদ্যটি যথাযথ কার্যকর করার প্রয়াসে সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষকের আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে তোলা। শিক্ষকদের জ্ঞানের ভান্ডার থাকবে সমৃদ্ধ। প্রশিক্ষণ, মর্যাদা ও বেতন স্কেল থাকবে সর্ব শীর্ষে। যাতে শিক্ষককে কোন কিছুর জন্য কারো কাছে মুখাপেক্ষী হতে না হয়। শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক থাকবে বন্ধু, দার্শনিক ও পথ প্রদর্শকের মতো। প্রভুর ভূমিকায় শিক্ষক কর্মকর্তা কারো কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হবে না। যেখানে ইউনেস্কোর নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সকল কমিটির প্রধান থাকবেন শিক্ষক। অথচ শিক্ষাদানসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকমন্ডলীর ভূমিকা গৌণ। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মূল কর্তৃত্ব থাকে শিক্ষাদান কাজে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের হাতে। যাদের কারো কারো শিক্ষাগত যোগ্যতা যথেষ্ট নয়। শিক্ষক নিয়োগ, বিভিন্ন কাজের টেন্ডারসহ বেশির ভাগ কাজ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় অনুষ্টিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটা ক্ষমতাশীল বা প্রভাবশালীদের মিনি অফিসে পরিণত হয়েছে। যখন যারা ক্ষমতায় আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দখলে চলে যায়। এছাড়াও এমপিও নন-এমপিও, বাড়িভাড়া, উৎসব বোনাস ও বৈশাখী ভাতা প্রদানে বৈষম্য দূর করে সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার মাধ্যমে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপ্রাদ্য কার্যকর করা প্রয়োজন। তা না হলে শিক্ষকদের স্বাধীনভাবে পাঠদান অনেকটা স্বপ্নের মতো থেকে যাবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কমিটিসহ শিক্ষকদের অনেকটা কর্তার নির্দেশে কর্ম করতে হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অনেক সুপারিশ বা সিদ্ধান্ত শুধু কাগজে-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বাধীনভাবে পাঠদানের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পাঠদান বহির্ভূত কাজের ওপর। বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক সংকটে হাবুডুবু খেলেও উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসের কাজে শিক্ষকদের সারা বছর নিয়োজিত করা হয়। এর একটা বাস্তব উদাহরণ উপস্থাপন করছি। ঢাকা শহরের মতিঝিল শিক্ষা থানার খিলগাঁও গভঃ কলোনী, আহম্মদবাগ, কমলাপুর ও মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তীব্র শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে মতিঝিল থানার শিক্ষা অফিসের ফোন করার কাজ, থানার শিক্ষকদের বেতনসহ নানা কাজ করার জন্য সারা বছর অফিসকে শিক্ষকদের কর্মস্থল হিসেবে পরিণত করেছে। মাত্র ২৩টা বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা ২৮০ জন, অফিস সহকারি ৪ জন, সহকারি থানা শিক্ষা কর্মকর্তা ২ জন। অথচ অফিসে সার্বক্ষণিক কাজে সারা বছর খিলগাঁও স্টাফ কোয়াটার প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ জন অভিজ্ঞ শিক্ষককে অফিসের কাজে নিয়োজিত হয়। থানা শিক্ষা কর্মকর্তার এহেন কর্মকান্ডে বিদ্যালয়টি ধ্বংসের পথে। সমাপনী পরীক্ষার কর্মযজ্ঞ ছাড়াও চার পাঁচ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন না করে নানা অফিশিয়াল কাজে থাকেন। সমাপনী পরীক্ষার সময় শিক্ষকদের পদচারণায় শিক্ষা অফিসগুলো হয়ে উঠে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বিদ্যালয়গুলো হয়ে যায় শিক্ষকশূন্য। অগণিত পাঠদান বহির্ভূত কাজের যন্ত্রণায় শিক্ষকরা অনেকটা ভুলে যেতে বসেছে পাঠদানই তাদের মূখ্য কাজ। অনেকটা প্রভু-ভৃত্যের মত প্রাথমিক শিক্ষকরা কর্মকর্তাদের নির্দেশ তামিল করতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। বকেয়া বিলসহ নানা প্রকার পাওনা যেন কর্মকর্তাদের করুণার ওপর নির্ভর করে। খোদ রাজধানীর মতিঝিল থানা শিক্ষকরা ঈদুল ফিতরের বোনাস ও ঈদুল আযহার মাসিক বেতন সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সময়মত পায়নি। অফিস আদেশ বা প্রধান শিক্ষককে তোয়াক্কা না করে সরাসরি শিক্ষকদের অফিসে কাজের জন্য নিয়ে আসে। মতিঝিল থানা শিক্ষা অফিসের জন্য থানা শিক্ষা অফিসারসহ ২জন সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার, ৪জন অফিস সহকারী, ১জন অফিস সহযোগী কি যথেষ্ট নয়? বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। পাঠদান কাজ ব্যাহত করে শিক্ষকদের অফিসে ডেকে এনে কাজ করানো শিশু অধিকার পরিপন্থী। বিশ্ব শিক্ষক দিবস সরকারিভাবে পালিত না হওয়ায় বিশ্ব শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য ও প্রতিপাদ্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। অপরদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো শিক্ষকদের নিয়ে তেমন কার্যকর কোন ভাবনা সরকারের কাছ থেকে দৃশ্যমান নয়। যার ফলে বেতন, মর্যাদা, স্বাধীনভাবে পাঠদান করে ক্ষমতাবান হওয়ার বিষয়টি শিক্ষকদের মনেও তেমন নাড়া দেয় না। দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিকের তৃনমূলের দুর্নীতির প্রতি কঠোর সর্তকবার্তা জানিয়েছে। পাঠদানে শিক্ষকরা স্বাধীন ও ক্ষমতাবান হলে দুর্নীতি অনেকটা কমে আসবে। যথাযথ বিধি মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলবে। শিক্ষকরা পাঠদানে স্বাধীন ও ক্ষমতাবান হলে অধিকার সম্পর্কে সজাগ হবেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বাস্তবে কার্যকর হবে।

মোঃ সিদ্দিকুর রহমান: আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037240982055664