দেশের প্রায় সব প্রত্যন্ত অঞ্চলেই শিক্ষা অবকাঠামো কিংবা উপকরণের অপ্রতুলতা কতটা, আমরা জানি। এই চিত্রও সংবাদমাধ্যমে বিরল নয় যে, ভবনের অভাবে পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। আমরা এও জানি, কোনো স্কুলের জন্য ভবন বরাদ্দ ও নির্মাণ সম্পন্ন করতে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়। সেদিক থেকে ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের পরিস্থিতি বিস্ময়-জাগানিয়া বৈকি।
সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, শহীদ আওলাদ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন তৈরির দশ মাস পরও সেখানে পাঠদান শুরু করা যায়নি। এমনও নয় যে, সেখানে পুরনো ভবন এখনও ব্যবহারযোগ্য। ফলে নতুন ভবনে ওঠার 'প্রস্তুতিতে' কিছুদিন দেরি হলেও খুব বেশি ক্ষতি নেই। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে আমাদের বিক্ষোভের বিষয় হচ্ছে, নতুন ভবনে উঠতে না পেরে বিদ্যালয়টিতে পাঠদানই বন্ধ রয়েছে। পুরনো যে ভবন রয়েছে, তা ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত। বিদ্যালয়ে আসাই বন্ধ হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এমনকি নতুন ভবনে যে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা রয়েছে, ব্যবহার না করার কারণে সেটাও অকেজো হওয়ার পথে। আমরা মনে করি, শিক্ষার অবহেলা ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ের কোনো নজির এর চেয়ে খারাপ হতে পারে না। আরও উদ্বেগের বিষয়, নতুন ভবনে পাঠদান বন্ধ হয়ে আছে নিছক শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর থেকে দু'জন শিক্ষককে গত এপ্রিলে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা বিদ্যালয়ে আসছেন না 'দূরত্বের' অজুহাত তোলে।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, চাকরিবিধির কোথায় লেখা রয়েছে যে, দূরের বিদ্যালয়ে বদলি বা নিয়োগ করা যাবে না? এই দুই শিক্ষক স্পষ্টতই চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে চলছেন। তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যোগদান না করেও শিক্ষকরা দশ মাস কীভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক দপ্তরকেও। একই সঙ্গে বিদ্যালয়টিতে পাঠ কার্যক্রমও শুরু করতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে এমন অবহেলা ও ঔদাসীন্য আর একটি দিনও মেনে নেওয়ার মতো নয়।
সৌজন্যে: সমকাল