শিক্ষার উল্টো পিঠে দায়িত্বহীন শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার উল্টো পিঠে দায়িত্বহীন শিক্ষক

হুমায়ূন কবির |

শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া জটিল। এ প্রক্রিয়া চলমান রাখার জন্য এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ, প্রয়োজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধুর সম্পর্ক। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও দেশের মানুষের চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা আশানুরূপ এগোয়নি। শিক্ষাব্যবস্থার নানান দুর্বলতা এর প্রধান কারণ।

আন্দোলন করে বেতনবৃদ্ধি করা হচ্ছে, সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নানান সুযোগ-সুবিধা আদায় করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এই সুযোগের কি আদৌ ঠিকমতো ব্যবহার করা হচ্ছে? শিক্ষার বর্তমান অবস্থার জন্য আমরা শুধু সরকারকে দায়ী করি; কিন্তু এহেন অবস্থার জন্য শিক্ষকগণও কি সমান দায়ী নন?

একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে অধিকাংশ শিক্ষক কীভাবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন, সরকারি নানান সুযোগ-সুবিধার কীভাবে অপব্যবহার করেন। এ প্রসঙ্গে কিছু চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি—

চট্টগ্রাম শহরের পাঁচ-ছয়টি স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম, তারা কেউ নিয়মিত স্কুলে যায় না—কিন্তু নিয়মিত কোচিংয়ে যায়, প্রায় সবার গৃহশিক্ষক রয়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে উত্তরে বলল, স্কুলে তেমন পড়ালেখা হয় না, তাই ভালো রেজাল্টের জন্য কোচিংয়ে যাওয়া। তাহলে কোচিংয়ের শিক্ষকরা কি সরকারি শিক্ষকদের চেয়েও বেশি যোগ্য নাকি শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতাই এর কারণ?

২০১৫ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ফিল্ড ওয়ার্ক হিসেবে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা—এসব বিষয়ে নগরের কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শন করার সুযোগ হয়। আমি যেসব স্কুলে গিয়েছি সেগুলোর লাইব্রেরির খোঁজ নিয়েছি।  অনেক স্কুলে লাইব্রেরি নাই আর কিছু স্কুলে লাইব্রেরি আছে কিন্তু কোনো কার্যক্রম নেই। একটি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি বলেন—লাইব্রেরিয়ান না থাকায় কার্যক্রম নেই। অথচ লাইব্রেরিটি সুবিশাল, সাজানো গোছানো এবং পর্যাপ্ত বই আছে; কিন্তু পড়ার টেবিল-চেয়ারগুলোতে ধুলো জমেছে। প্রশ্ন হলো, লাইব্রেরি থাকার পরও কার্যক্রম নেই—এর দায়ভার কার?

মাধ্যমিক স্কুলে পড়াকালীন কিছু স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। আমাদের স্কুলটি সরকারি ছিল; সে সুবাদে বিশাল বিশাল দুটি ল্যাব ছিল এবং কম্পিউটার রুম ছিল। ল্যাবে পর্যাপ্ত কেমিক্যাল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছিল। কিন্তু আমরা ল্যাব ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছিলাম দু বছরে মাত্র  কয়েকবার। এই রাগে একবার আমরা কয়েক বন্ধু মিলে ১৫-২০টি কাচনল ভেঙে ফেলি যা ছিল নষ্ট অর্থাত্ ব্যবহার না করাতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অথচ প্রতিবছর ল্যাবের জন্য বরাদ্দ আসে কিন্তু এর কোনো হদিস নেই। কম্পিউটার রুমে কম্পিউটার আছে ঠিকই কিন্তু এর যথাযথ ব্যবহার নেই। এহেন অবস্থার জন্য কি শিক্ষকগণ দায়ী নন?

আমার এ লেখায় আদর্শ শিক্ষকদের বাইরে রেখে দায়িত্বহীন শিক্ষকদের কথা বলেছি। এখনো অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা ক্লাসরুমে ঘুমিয়ে পড়েন, আড্ডা দিয়ে সময় অপচয় করেন, পরীক্ষা চলে আসছে কিন্তু সিলেবাস সম্পন্ন হয় না, সম্পন্ন হলেও তেমন কিছুই পড়ানো হয় না। অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষকের অশুভ আচরণের শিকার হয়।

এসব কি শিক্ষার্থীদের স্কুলের প্রতি অনীহার কারণ নয়? এসব কি শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে আগ্রহী হওয়ার কারণ নয়? পরিশেষে বলতে চাই—দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে মজবুত করতে, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সরকার সকলকেই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00376296043396