প্রাক প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চলছে শিক্ষা নিয়ে নানান বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক, গাইড বই বাজারজাতকারী বিভিন্ন প্রকাশনী, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিক। এদের কাছে জিম্মি দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী। সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উচ্চশিক্ষিত বেকারদের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে নামমাত্র বেতনে কতিপয় শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে মার্কেটিংয়ের কাজে ব্যবহার করে ছাত্র সংগ্রহ করে চলে এইসব প্রতিষ্ঠান। বুধবার (৯ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, একশ্রেণির শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় কম নম্বর দেয়া, ফেল করানো এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁদের কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এইসব শিক্ষকের অবৈধ বাণিজ্যের কারণে শিক্ষা একটি বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়েছে এবং শিক্ষা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ওপর মারাত্মক আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানশিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
কোচিং সেন্টারগুলো বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বিষফোড়ায় পরিণত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসের চেয়ে কোচিংয়ে যেতে আগ্রহী বেশি। কারণ কোচিং সেন্টারগুলো ছাত্রছাত্রীদের নানান প্রলোভন দেখায়। তারা শিক্ষাকে সুপারসপের মতো নানাভাবে পণ্যের আকারে সাজিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাসের পরিবেশকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারছে না। এছাড়া স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষক কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় তাদের ভয়েও অনেকে কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়।
শিক্ষানীতিতে প্রাইভেট, কোচিং, গাইড বই নিষিদ্ধ হলেও কোনোভাবেই এসবের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। বিক্রিযোগ্য পণ্যও নয়। শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। শিক্ষার ব্যয় কমাতে হবে যে কোনো মূল্যে।
মিকাইল হোসেন : উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলেজ, সাভার, ঢাকা।