শিশুদের পক্ষে কিছু কথা - দৈনিকশিক্ষা

শিশুদের পক্ষে কিছু কথা

বদরুল আলম |

শিশুটি একটু খেলতে চায়, খোলা আকাশের নীচে একটু ঘুরতে চায়, জমিনে প্রকৃতির অসংখ্য সৌন্দর্য ভোগ করতে চায়, কিন্তু কোন ফুরসত নেই। তাকে বন্দি করা হয়েছে সিলেবাসে, আটকে রেখেছে অপরিকল্পিত এক রুটিন। পাগলের মতো ছুটতে হয়েছে অদৃশ্য এক প্রতিযোগিতায়। এ তো এক নেশা! শিশুদের দাবিগুলো জানিয়ে দেওয়ার জন্য মূলত ক্ষুদ্র এই প্রয়াস।       

যতই পড়িবে ততই শিখিবে-এর অর্থ কি এক বছরে  এক ক্লাসে ১৪-১৫ টি বই পড়া? এক বছরে অনেক বই পড়লে অনেক জ্ঞান অর্জন হবে এমন ভাবাটা মোটেও উচিত নয়। এক বছরে মুলত ১০-১১ মাসে, একটি ক্লাসে এত বই পড়ার কোন যুক্তি আছে বলে মনে হয় না। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে ১৩-১৪ টি পাঠ্য বই পড়তে হয়। এটি বেশ কয়েক বছর যাবৎ শুরু হয়েছে। শুনেছি আগে ছাত্র জীবনে এত বই পড়ানো হতো না। তাই বলে কি তখন কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, শিক্ষক হয়নি? তাহলে কেন এখন এত পড়াশুনা। আসলে পড়াশুনা তো হচ্ছেই না বরং শুরু হয়েছে শিক্ষাভীতি। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী পড়ে আসছে মাত্র ৬ টি বই। অথচ এই শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এসে বছরের শুরুতে ১৩-১৪ টি বই হাতে পেয়ে ভয় পেয়ে যাচ্ছে। বছরের শুরুতে সরকার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। তা পেয়ে তাদের আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে তাদের মধ্যে হচ্ছে ভীতির সঞ্চার । এমনিতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকে বিষয়ভিত্তিক ভীতি। 

এডুকেশন ওয়াচ নামক সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর ৫ টি বিষয়ে ২৭ টি দক্ষতা নির্দেশকের মাধ্যমে ৫৪ ধরনের প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতা নিনর্য়ে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে ভাল ফল এসেছে বিজ্ঞান বিষয়ে। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ, বাংলাদেশ গ্লোবাল স্টাডিজে ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ, বাংলায় ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ, গণিতে ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ইংরেজিতে ৩৮ শতাংশ। তবে গ্রাম-শহর ভেদে দক্ষতার হারে তফাৎ রয়েছে। ইংরেজি বিষয়ে শহরের শিক্ষার্থীরা গ্রামের শিক্ষার্থীর তুলনায় এগিয়ে।        

গণিত ভীতি শুধু বাংলাদেশে নয় , বিশ্বের প্রায় সব দেশের শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে। তবে অন্যান্য দেশে গনিত ভীতি দুর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রাইমারি স্কুল থেকেই গণিত ভীতি শুরু হয়। পরবর্তীতে তা আরও প্রকট আকার ধারন করে। তাই প্রাথমিকের গন্ডিতেই এই ভীতি দূর করতে হবে। গণিত মানুষের বাস্তব জীবনে কিভাবে কাজে লাগে তা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ধারনায় আনতে হবে। আজকাল ছোটদের গণিত শেখার জন্য মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে অনেক ধরনের অ্যাপস পাওয়া যায়, যা দিয়ে গণিতকে খুব সহজেই খেলার ছলে সহজবোধ্য করা যায়।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্য বইয়ের সংখ্যা কমাতে হবে। বইয়ের মান উন্নয়ন ও সহজবোধ্য করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, শিক্ষক নিয়োগ ত্বরান্বিত করতে হবে এবং প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। শিশুদের নিয়ে আমাদের ভাবনার অন্ত নেই।  সীমাহীন ভাবনায় আছি আমরা। যে ভাবনা অনেক আগে ভেবেছিলেন কবি সুকান্ত ।

এই মুহূর্তে প্রিয় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কে একটু স্মরণ করে বলি, ‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের। চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার। অবশেষে সব কাজ সেরে আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে করে যাব আশীর্বাদ, তারপর হব ইতিহাস।’

লেখক: প্রভাষক, তাজপুর ডিগ্রী কলেজ, সিলেট।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.022608041763306