শুদ্ধ বানানে হোক বাংলা চর্চা - দৈনিকশিক্ষা

শুদ্ধ বানানে হোক বাংলা চর্চা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলা আমার মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা; হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশের ভাষা। এ মাসের দিনগুলোতে ভাষার প্রতি আমরা কতভাবেই না শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে থাকি! বাংলা বর্ণমালাখচিত সাদা-কালো পোশাকে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মাসব্যাপী বিভিন্ন আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, বইমেলায় যাওয়া, বই কেনা অনেকটা রুটিনে পরিণত হয়ে যায়। অনেকেই ভাবি, ভাষার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়তো যথাযথভাবে সম্পন্ন হলো। আর তাই মাস শেষ হলেই ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও একুশের চেতনা কেন জানি ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যেতে থাকে! কিন্তু ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তো সারাবছর জারি রাখার বিষয়। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, বিশেষ কোনো দিন ও অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সব দায়িত্ব পালন শেষ হওয়ার কথা নয়। ভাষাকে অবিকৃত রাখা, নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর উৎকর্ষ সাধনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা, শুদ্ধ বানান ও উচ্চারণে বাংলা লেখা ও বলা বছরব্যাপী ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অন্যতম পথ। শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা ও শুদ্ধ বানানে বাংলা লেখায় আমাদের আন্তরিকতা, সতর্কতা ও জ্ঞান বাড়ানোর কতটুকু উদ্যোগ নিয়েছি? সমাজের শিক্ষিত ও সচেতন ব্যক্তি আমরা যারা আছি, তারা এ বিষয়টি কি মাথায় রেখেছি? হয়তো রাখিনি। শুদ্ধ-অশুদ্ধ যা-ই হোক, আমরা ইংরেজি লেখার সময় অনেক সতর্ক থাকি; পাছে যোগ্যতা ও স্মার্টনেস ধরে কেউ যেন টান দিতে না পারে। কিন্তু ভুল বানানে বাংলা লেখায় কারও দক্ষতা, যোগ্যতা নিয়ে সাধারণত কোনো প্রশ্ন তোলা হয় না। সে জন্য আমরা অশুদ্ধ উচ্চারণ ও বানানে বাংলা বলছি, লিখছি ও পড়ছি। কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই; শোধরানোর কোনো তাগিদ নেই। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে একই ভুলের চর্বিতচর্বণ করেই চলেছি।

পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেলের স্ট্ক্রল ও ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাসে ভুল বানান অহরহ চোখে পড়ছে। আমরা লিখছি ...গানের দলে 'ভিরে' যাই। হৃদয়টা 'পরে' থাকে। অলির কথা শুনে বকুল 'হাঁসে'। সম্বল 'চিঁড়ে'-মুড়ি। পাহাড় ধসে 'ঝড়ল' ৫ প্রাণ। রাজধানীতে ২৩ 'জুয়ারি'কে আটক। এই হলো ফেসবুকের কয়েকটি পোস্ট ও পত্রিকার বিভিন্ন খবরের শিরোনামের নমুনামাত্র। যারা এ ভুল করছেন, তারা কিন্তু উচ্চশিক্ষিত এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। অল্প বয়সের শিক্ষার্থী ও আমাদের মধ্যে যারা সরাসরি লেখাপড়ার সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তারা যখন টিভি চ্যানেলে কোনো লেখা দেখে, পত্রপত্রিকা পড়ে তখন ওখানে যেভাবে লেখা থাকে সেটাকে সঠিক মনে করে। ওই ব্যক্তিবর্গের জ্ঞান-গরিমার প্রতি সাধারণের বিশ্বাস এতটাই সুদৃঢ় যে, তারা ভুল বানানে কিছু লিখতে পারে, তা কখনই ভাবতে পারে না। অল্প বয়সের শিক্ষার্থীরা ছাপার অক্ষরে কোনো কিছু দেখলে ওটাকেই শুদ্ধ ও সঠিক হিসেবে ধরে নিয়ে তারাও ওই বানানে লিখছে। এতে ভুল বানান তাদের মন-মগজে ছোটবেলা থেকেই গেঁথে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এ ধরনের ভুল ঘাঁটাঘাঁটিতে আমার মনে হয়েছে, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষিত ব্যক্তি 'র' এবং 'ড়'-এর উচ্চারণে পার্থক্য বুঝতে পারছেন না। তাই 'পাড়'-এর বদলে লিখছেন পুকুর 'পার' এবং 'শাড়ি'র বদলে 'শারি', 'জুয়াড়ি'র বদলে 'জুয়ারি'। 'সারি সারি' গাছ, 'উজাড়' করা ভালোবাসা হয়ে যাচ্ছে যথাক্রমে 'শাড়ী শাড়ী' গাছ, 'উজার' করা ভালোবাসা। লেখা'পড়া' হয়ে যাচ্ছে লেখা'পরা'।

আমরা কি আসলে এগুলোর শুদ্ধ বানান জানি না? যারা এ ধরনের ভুল নিয়মিত করে যাচ্ছেন, তাদের ভাষাজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা খুবই যৌক্তিক। কোনো কিছু লেখার আগে সন্দেহ দেখা দিলে অভিধান দেখে সঠিক বানানে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমাদের অনেকেরই বাংলা বর্ণমালার ক্রম চটজলদি মনে না পড়ার কারণে অভিধান উল্টাতে গিয়েও অনেক সময় ক্ষেপণ হয়। তাই প্রতিটি বাংলা অভিধানের শুরুতে বর্ণমালার তালিকাটি জুড়ে দিলে সাধারণের অনেক সুবিধা হবে। একই শব্দ বিভিন্নজন বিভিন্ন বানানে লিখে থাকেন। বাংলা বানানে সমতা আনয়নে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও সমন্বয় জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেকেই উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃগোষ্ঠী বোঝাতে ঢালাওভাবে 'আদিবাসী' শব্দটি ব্যবহার করে চলেছি। কখনও কি ভেবে দেখেছি, এ ব্যাপারে আমাদের সংবিধান কী বলছে? একইভাবে সংসদ সদস্যদের অনেক ক্ষেত্রে 'সাংসদ' বলে অভিহিত করা হচ্ছে।

কিন্তু বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি যখন আমাদের জাতীয় সংসদের স্পিকার ছিলেন তখন রুলিং দিয়েছিলেন- সংসদ সদস্যদের 'সাংসদ' বলার কোনো সুযোগ নেই। এসব ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা কতটুকু? কবে হবে আমাদের বোধোদয়? প্রতিনিয়ত ভুলের সমষ্টি কোনো একদিন যদি পাহাড়সম হয়ে যায়, তাহলে সবাই মিলে ঠেলেও সে ভুলগুলোকে সহজে সরানো যাবে না। কোনো বিদেশির উপস্থিতি ছাড়াও সভা-সমিতি, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের ব্যানার; সন্তান, ভাইবোনের বিয়ের কার্ড ইংরেজিতে তৈরি এবং এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান ইংরেজিতে সঞ্চালনা, প্রতিনিয়ত ভুল বানান ও উচ্চারণে বাংলার চর্চা বাংলা ভাষার প্রতি আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেই চলেছে। তাই বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে আমাদের সামগ্রিক চিন্তা-চেতনা, কথা-কাজ ও পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সামঞ্জস্য রক্ষার বিষয়টি বড় বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
 

লেখক; সালাহ্‌ উদ্দিন নাগরী, সরকারি চাকরিজীবী

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038039684295654