সরকারি বড় বড় কর্মকর্তা কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেই আজকের এই অবস্থানে রয়েছেন। তাই তাঁরা যত বড় পদেই থাকুন না কেন, তাঁদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মান-মর্যাদা ও বেতন স্কেল একই ধাপের হতে পারে না। এমন মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা সব সময়ই মর্যাদার পাত্র। আমরা যদি তাঁদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করতে না পারি, তবে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান এর থেকে আর উন্নত করা যাবে না। তবে শিক্ষকদেরও তাঁদের সম্মান নিয়ে আরো সচেতন হতে হবে। কারণ শুধু বেতন স্কেল দিয়েই কোনো শিক্ষকের মর্যাদার পরিমাপ হতে পারে না। তাঁদেরও উচিত আন্দোলন করার মতো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা।’
শুক্রবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো ‘সম্পাদকীয়’ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিক দীনেশ দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। তার পরও বিভিন্ন দপ্তর, পরিদপ্তর থেকে আন্দোলন করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এই আন্দোলন করা ছাড়া তাঁদের ন্যায্য পাওনা আদায় হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও অনেক দিন থেকে আন্দোলন করছেন। কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
জবাবে মাকসুদ কামাল বলেন, নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, প্রকৌশলী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ‘মর্যাদার’ আন্দোলন ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। কিছু আমলা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন। শিক্ষকরা অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন। বেতন কাঠামো নিয়ে চলমান এই বিতর্ক সহসাই কাটছে না। বরং তীব্রতর হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন। সংকট সমাধানে অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণের পাশাপাশি এতে বিদ্যমান সব অসংগতি দূর করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
মাকসুদ কামাল আরো বলেন, দাবি মানা না হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১১ জানুয়ারি শুরু করবে অবিরাম কর্মবিরতি। সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় তৃতীয় গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি বন্ধ হবে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৪ জানুয়ারি বিবৃতি দেওয়া হলেও সেই বিবৃতিতে ধোঁয়াশা না কাটার অভিযোগও তাঁদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন করার দরকার ছিল না যদি সরকারের পক্ষ থেকে সেভাবে আমাদের কথাগুলো সঠিকভাবে আসত। তা তো আসছে না। আমরা সরকারের মন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীর পর্যায়ে বারবার দেখা করে কিছু বলার চেষ্টা করেছি। আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। কিন্তু কোনো সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়ায় আমরা এখন বাধ্য হয়ে আন্দোলনে যাচ্ছি।’
এ পর্যায়ে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দিয়েই একজন প্রশাসন ক্যাডারের অফিসার হিসেবে যোগদান করছেন। তাঁর মর্যাদাটাও সরকারের খেয়াল রাখতে হবে। সরকার যদি মেধাবীদের আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে না পারে, তবে তো মেধাবীরা আর দেশে চাকরি করার আগ্রহ পাবে না।
তিনি বলেন, ‘এখনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা কোনো অংশে কম নয়। একজন জাতীয় অধ্যাপক সরকারের কাছে যদি পাঁচ লাখ টাকাও অনারারিয়াম চান, কবে সরকার তাঁর কথা রাখছে। আর দেখেন, আমি সরকারি সচিব হিসেবে মাত্র ৪০ হাজার টাকা বেতন পেতাম। অবসরের পর একটি বেসরকারি টেলিভিশন থেকে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা অফার করা হলো। আমি সেখানে কাজ করেছি। আমার সরকারি চাকরির মর্যাদা যদি না থাকত, তাহলে কি এভাবে বেসরকারি খাতে লাখ লাখ টাকা পেতাম।’