গাজীপুরের শ্রীপুরে অনুমোদনবিহীনভাবে বসত বাড়ির রুম ভাড়া নিয়ে কেজি, প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুলের নামে কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। শিক্ষার নামে কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর ও উপজেলায় ৫ শতাধিক কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বজায় রাখা হচ্ছে না ন্যূনতম শিক্ষার মান। অদক্ষ ও কথিত শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে করানো হচ্ছে পাঠ দান। অনেক কিন্ডার গার্টেন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সরকারি নীতিমালা না মেনেই একটি স্কুলের সাথে প্রতিযোগিতা করে একই স্থানে আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষরা। বৈধ-অবৈধ ভাবে শিক্ষা বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে শ্রীপুরের কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাতারা। পর্যাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও স্কুলগুলো প্রতি বছরই হাতিয়ে নিচ্ছে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অসংখ্য পাঠ্যবই। একটি প্রতিষ্ঠানের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোন নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন না থাকলেও ২শ থেকে ১২শ গজের মধ্যে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ও কয়েকটি আবাসিক রুম ভাড়া নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ফি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেজি, প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র ছাত্রীদের কোচিং করানো হচ্ছে বাড়তি আয়ের আশায়।
মাওনা চৌরাস্তা ও বেড়াইদেরচালা এলাকায় ২শ থেকে ১২শ গজের মধ্যে অন্তত ১৪টি কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। প্রতি শ্রেণিতে ২/৩ জন করে ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে ৮০/১০০ সেট বইয়ের চাহিদা দিয়ে থাকে। শ্রীপুরের আনাচে কানাচে নানা সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে অভিভাবকদের মন কেড়ে নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক বছর শুরু হওয়ার আগেই সিসি টিভিতে পর্যবেক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে অনেক অভিভাবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে থাকেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। অনেক অভিভাবক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগ করেন, শুধু টাকাই খরচ করছি, পড়ালেখার মান কোনটাতেই ভালো না। নাম প্রকাশ না করে একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলেকে কয়েকটি কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি করে ফেলেছি। কোনটিতেই ছেলে ভালো ফলাফল করতে পারে না। শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকার কারণে।
এ ব্যাপারে অশিন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন জানান, শিক্ষার অনুমোদন না নিয়ে কেওয়া এলাকায় ৫০০ গজের মধ্যে ৩/৪টি কেজি স্কুল রয়েছে। আমি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, এখানে প্রায় ৩৫০টির বেশি এমন স্কুল রয়েছে। প্রতিবছরই তালিকার মাধ্যমে বই বিতরণ করা হয়। তবে নীতিমালা না মানার বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।