শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন! - দৈনিকশিক্ষা

শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন!

মোঃ আঃ বাতেন ফারুকী |

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারিরা মোবাইল নিয়ে আসলেও শিক্ষার্থীরা মোবাইল নিয়ে আসবে না এটাইতো স্বাভাবিক। কিন্তু অপ্রিয় সত্য হলো- বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন নিয়েই শ্রেণিকক্ষে আসে। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন আনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা কৌশলে মোবাইল ফোন বিদ্যালয়ে নিয়ে আসে যা খুঁজে বের করা সহজ কাজ নয়। তবুও চেষ্টা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু মোবাইল উদ্ধার করছেন শিক্ষকরা। কিন্তু একেবারে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে যেখানে হাল ছেড়ে দেয়া হয় সেখানে-তো মোবাইলের রমরমা অবস্থা।

মোবাইল একটি অত্যাধুনিক অপরিহার্য প্রযুক্তি হলেও এটি যে শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশোনা থেকে যোজন যোজন দূরে সরিয়ে দিচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। শিক্ষক, অভিভাবক এমনকি সরকার চাইলেও শিক্ষার্থীদের হাত থেকে মোবাইল সরানো যাবে না। এটা তাবৎ দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ একেবারেই সোজা। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক; এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই বলে কি ধূমপান সংশ্লিষ্ট দ্রব্যাদি উৎপাদন বন্ধ আছে? বরং আরও বেশি আকৃষ্ট করার জন্য কিংবা সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরণ লিপিবদ্ধ হেতু ধুমপায়ীর(ক্ষেত্র বিশেষে মাদকাসক্ত) সংখ্যা কমে যাওয়ার আশংকায় উৎপাদনকারীরা চটকদার ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। ঠিক তেমনি একটি নজির চলছে মোবাইল ও নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।

সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা চলাকালীন অনিচ্ছা সত্ত্বেও এর মোকাবেলা করতে হয়েছে। গাজি টিভিতে খেলা চলাকালীন প্রায় প্রতিটি ওভার শেষেই একটি বিজ্ঞাপন নজর কেড়েছে। বিজ্ঞাপনটি এ রকম: একজন স্মার্ট, আধুনিক মহিলা শিক্ষক (সম্ভবত মডেল চরিত্রে অবিবাহিতা) শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন। গোটা কয়েক শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের পোশাক পেশার সাথে মানানসই নয়। শিক্ষক নাম ডাকছেন, তানজি..না(তানজিনা), উত্তরে -'ইয়েস ম্যাম'। রা..ফি(রাফি), উত্তরে-'ইয়েস ম্যাম' ধ্বনি ধ্বনিত হলো। ম্যাম 'ওঁ' বলে এদিক ওদিক দেখলেন কিন্তু ক্লাসরুমের কোথাও রাফি নেই। পরক্ষণেই রাফির এক সহপাঠী এন্ড্রয়েড মোবাইল সেটখানা ম্যামের দিকে ঘুরিয়ে ধরলো। ম্যাম ওঁ বলে একটু চমকে উঠলো। কারণ মোবাইলের মাধ্যমে অপর প্রান্তে রাফি সরাসরি ক্লাসের সাথে যুক্ত হয়েছে। আর বলছে, "ম্যাম জ্যামে আছি, তাই বলে তো আপনার ক্লাস মিস করতে পারি না।"

বিজ্ঞাপনটির উদ্দেশ্য পরিষ্কার। বিভিন্ন আকর্ষণীয় ইন্টারনেট প্যাকেজের প্রতি তরুণ-তরুণীদেরকে আকৃষ্ট করা। বিজ্ঞাপনদাতা তাই ঠিক বিশ্বকাপ খেলার সময়টাকে বেছে নিয়েছেন। তা তো বিজ্ঞাপনদাতারা করবেই। প্রশ্ন অন্য জায়গায়। শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ বিষয়ে একটি পরিপত্র আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডঃ এস এম ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিগত ১৫ অক্টোবর ২০১৭ তারিখ পরিপত্রটি জারি করা হয়।

এমন একটি পরিপত্র থাকা অবস্থায় উল্লেখিত বিজ্ঞাপনটি কী করে টেলিভিশনে সবার চোখের ওপর প্রচারিত হয়। তাও বিশ্বকাপ খেলা চলাকালীন? কী সাংঘাতিক সাংঘর্ষিক ব্যাপার! তার চাইতেও বড় প্রশ্ন শিক্ষা বিষয়ক কোনো বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমোদন লাভের আগে শিক্ষা বিভাগের ছাড়পত্র নেয়ার প্রয়োজন থাকা উচিত কি না? থাকলে ছাড়পত্র বা অনুমোদন দিল কে বা কারা? জানি এতসব প্রশ্ন করা সহজ। কিন্তু তার চেয়েও সহজে বলে দেয়া যায় এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এত সহজ না। শিক্ষার মতো এমন একটি সেনসিটিভ ক্ষেত্রে এত উদাসীন অবস্থা চলতে দেয়া কি উচিত?

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ নিয়ে মজার মজার উপাখ্যান শুনতে পাওয়া যায়। শিক্ষা বিভাগের শীর্ষ ব্যক্তির কোটেশনযোগ্য হাস্যকর উক্তির কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সবিশেষ অনুরোধ অন্তত শিক্ষা বিভাগটিকে রাহুমুক্ত রাখুন। অবশ্য ইতোমধ্যে শিক্ষা বিভাগ নিয়ে কিছু ইতিবাচক মনোভাব পোষণ শুরু হয়ে গেছে। স্বীকার করতে হবে, শিক্ষায় যত দ্রুত উন্নতি ঘটবে উন্নতির ভিত ততই টেকসই হবে। অতএব শিক্ষা বিভাগকে একটু ছাড় দিতেই হবে।

পাদটীকা: এক ছাত্র এসে বলল, "স্যার, আমার বাবা আপনাকে শ্রদ্ধা করে। দয়া করে আপনি তাকে বলুন, উনি যা ইচ্ছা তাই করুক, তবে উনি যেন আর বিয়ে না করেন।"

লেখক: শিক্ষক

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037150382995605