সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

পুরান ঢাকার চানখাঁরপুলে স্বনামখ্যাত শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষার্থী প্রায় ১০ হাজার। বিপরীতে শ্রেণিকক্ষ মাত্র ৫৮টি। এত অল্পসংখ্যক শ্রেণিকক্ষ নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। কলেজে শিক্ষক আছেন ১০৬ জন। এর মধ্যে নিয়মিত শিক্ষক ৭০ জন। লাইব্রেরিতে বই আছে প্রায় ২৬ হাজার। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও মাসুদ রানা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কলেজ ফান্ডে ৭০ কোটি টাকার বেশি জমা থাকলেও শ্রেণিকক্ষের এই সংকট কাটাতে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় কলেজটিতে একটি আটতলা ভবন নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও জমিসংক্রান্ত জটিলতায় সেই কাজ শুরু করা যায়নি।

কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পাস কোর্সের পাশাপাশি ১৫টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স চালু আছে। এর মধ্যে আছে বাংলা, ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, অর্থনীতি, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, মনোবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, কম্পিউটার ও বিবিএ। কলেজটির আর্থিক সংকট না থাকলেও বিজ্ঞান শিক্ষায় রয়েছে প্রচণ্ড অনীহা।

অনার্স ও মাস্টার্সে নেই বিজ্ঞানের কোনো বিষয়। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও হতাশাজনক। উচ্চ মাধ্যমিকে দুই বর্ষে বর্তমানে শিক্ষার্থী প্রায় এক হাজার ৩০০ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০। বিজ্ঞান বিভাগের ফলও ভালো নয়।

কলেজের শিক্ষকদের একটি বড় অংশ প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত। ওই শিক্ষকরা কলেজে পাঠদানের চেয়ে প্রাইভেট-কোচিং নিয়ে বেশি ব্যস্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকজন শিক্ষক ক্লিনিক ও ফার্মেসি ব্যবসায় যুক্ত। কলেজে হাজিরা দিয়ে তাঁরা চলে যান নিজ নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশি মনোযোগী হওয়ায় ওই শিক্ষকরা কলেজে ডিজিটাল হাজিরা সিস্টেম করতে দেননি।

সম্প্রতি কলেজটির নামে কেরানীগঞ্জে ৪৩১ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে। কলেজ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এই জমি কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, তাঁদের প্রয়োজন কলেজসংলগ্ন জমি। কিন্তু সেটা না করে এত দূরে ১০ কোটি টাকা দিয়ে জমি কেনার পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে গভর্নিং বডির।

কলেজটির অনার্স ও মাস্টার্সের ফল সন্তোষজনক হলেও উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ক্রমশ নিম্নমুখী। ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৬৫ জন অংশ নিয়ে পাস করে ৩৬০ জন। পাসের হার ৫৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৬৪৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৩৮৮ জন। পাসের হার ৬০ শতাংশ। আর ২০১৭ সালে ৬৩৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৪১৪ জন। পাসের হার ছিল ৬৫ শতাংশ। তবে গত কয়েক বছরে অনার্স ও মাস্টার্সে পাসের হার ৯০ শতাংশ।

উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইয়াসিন বলে, ‘আমাদের অনেক শিক্ষার্থী, কিন্তু কলেজে খেলার মাঠ নেই। কলেজের ভেতরে একটু চলাফেরার জায়গাও নেই। বছরে যখন একবার কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়, সেটা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে।’

অনার্স বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের শ্রেণিকক্ষের প্রচণ্ড সংকট। অনেক সময় ক্লাসরুমই খালি পাওয়া যায় না। ফলে ক্লাসের সময় পরিবর্তন হয়ে যায়।’ 

অনার্স হিসাববিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘কলেজের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে রীতিমতো বাধ্য করা হয়। তাঁদের কাছে প্রাইভেট পড়লে ভালোভাবে কেয়ার নেন, না পড়লে ঝামেলায় পড়তে হয়। বিশেষ করে একজন স্যার ও একজন ম্যাডাম প্রাইভেটের ওপরই বেশি জোর দেন।’

কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমান বলেন, ‘কলেজের জমির পরিমাণ কম হওয়ায় এবং কাগজপত্রে ঝামেলা থাকায় নতুন ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। আর আমাদের শ্রেণিকক্ষের কিছুটা সংকট রয়েছে। তবে কলেজের নামে বর্তমান গভর্নিং বডি এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জে ৪৩১ শতাংশ জমি কিনেছে। কলেজসংলগ্ন জমি কেনা গেলে এখনই আমরা ভবন নির্মাণসহ নানা কাজ করতে পারতাম।’

বিজ্ঞান বিভাগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, ‘বিজ্ঞানে আমাদের শিক্ষার্থীরা বরাবরই পিছিয়ে। আমরা নানাভাবে এই বিভাগকে উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগের চেয়ে আমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বেড়েছে। আর অনার্স ও মাস্টার্সে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করছে।’  

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046248435974121