বিতর্কিত কোচিং সেন্টার সাইফুর’স এর অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে পরিচালিত তদন্ত ও অনুসন্ধান জোরদারকরণের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, কোন সংস্থা কতটুকু অনুসন্ধান করলো, কী পেল? দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে মাননীয় মন্ত্রীকে জানাতে বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করতে দুদক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের প্রেক্ষিতে সাইফুর’স এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে যাচাই করে সম্প্রতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
এ অভিযোগ অনুসন্ধানের ফলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান খানকে দুদকের মুখোমুখি হতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয়ের সব হিসাবও পেশ করতে হবে দুদকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠানটির সব আয়কর নথিও খতিয়ে দেখবে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটি। এছাড়া ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সাইফুর’স কোনো ধরনের প্রতারণা বা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হবে।
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরুর দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুদকে সাইফুর’স এর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সুপারিশ আসে। প্রাথমিকভাবে যাচাই করে সাইফুর’স এর দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
এর আগে গত মার্চ মাসে সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদককে অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলা দায়ের ও গোয়েন্দা সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। পরে লিখিতভাবে দুদককে অনুসন্ধান করতে সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির সুপারিশ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
ইংরেজি শিক্ষার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘দক্ষ হ্যাকার’ বানানোর প্ররোচনার অভিযোগ ওঠার পর কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। তার পরপরই সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ উপায় খুঁজতে সাংবাদিক পরিচয়ধারী চার শিবিরকর্মীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বৈঠকের অভিযোগ ওঠে।
কোচিং সেন্টারটির এসব কর্মকাণ্ডের পর গত ২৮ মার্চ শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে নির্দেশনা দেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষাসচিবকে দেওয়া লিখিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ‘এই বিষয়টি মারাত্মক। এ বিষয়ে সিরিয়াসলি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নথিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর করা প্রয়োজন।
শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনায় ‘থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা, মামলা দায়ের করা, দুদককে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করার’ কথা বলা হয়। ‘অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য বলা প্রয়োজন’- বলা হয় নির্দেশনায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির পর গত ১৩ মার্চ একটি সংবাদপত্রে ‘হ্যাকারদের হাতছাড়া’ শিরোনামে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সমালোচনায় আসে সাইফুর’স কোচিং সেন্টার। ওই বিজ্ঞাপনে ‘হ্যাকার’ বানানোর কথা বলে ইংরেজি শেখায় প্রলুব্ধ করে সাইফুর’স। ‘হ্যাকার’ বানানোর প্ররোচনা দেওয়ায় গত ২৩ মার্চ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন।
সাইফুরসকে চোরের রাজা আখ্যা দেয় মন্ত্রী।