বিতর্কিত সাইফুরসসহ সকল কোচিং সেন্টারের সব অনুষ্ঠান বর্জন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ সকল প্রগতিশীল শিক্ষাবিদরা। চাঁদাবাজির দায়ে অভিযুক্ত, ভুইফোঁড় ও নিবন্ধনহীন অভিভাবক ফোরামকে ইতিমধ্যে বর্জন করেছেন ঢাবি ভিসি। গত ২৮ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে ভুইফোঁড় অভিভাবক ফোরাম একটি তথাকথিত গোলটেবিল বৈঠক ডেকেছিল। ঢাবি ভিসি জানতে পারেন ওই চক্রটি প্রতিক্রিয়াশীল, চাঁদাবাজ ও শিক্ষাবিদদের নাম বিক্রি করে খাওয়ার কাজে নিয়োজিত বহুবছর যাবত।
জানা যায়, নীতি নৈতিকতা বর্জিত চারজন সাইফুর’সকে বাঁচাতে নানা ফন্দিফিকির করে আসছে। এই চক্রটিই কয়েকবছর আগে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত ক্যামব্রিয়ানের টাকায় বিদেশ সফর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই চক্রটিই ভুইফোঁড় ও নিবন্ধনহীন অভিভাবক ফোরাম বানিয়ে স্মরনিকার নামে বিজ্ঞাপনবাজি করে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির পর ইংরেজি শেখানোর নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘দক্ষ হ্যাকার’ বানানোর প্ররোচনার অভিযোগ ওঠার পর কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে মামলা দায়ের ও গোয়েন্দা সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তার পরপরই সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করতে সাংবাদিক পরিচয়ধারী চারব্যক্তির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বৈঠকের অভিযোগ ওঠে। পরে লিখিতভাবে দুদককে অনুসন্ধান করতে সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৪ মার্চ রাজধানীর রমনা থানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আপত্তিকর বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য রমনা থানা পুলিশ কোচিং সেন্টারটির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এদিকে সাইফুরস কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাইফুরসের সব ধরনের কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সব আয়কর নথিও খতিয়ে দেখছে দুদক। তাদের আয়–ব্যয়ের সব হিসাবও পেশ করতে হবে দুদকে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতারণা বা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নানা অপকর্মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের মুখে থাকা সাইফুরস’স কোচিং সেন্টার লজ্জা ঢাকতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সমালোচনায় থাকা কোচিং সেন্টারটি এবার বিভিন্ন কোর্সে ছাড় দিয়ে শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এদিকে কোচিং সেন্টারটির রাজধানীর পান্থপথ শাখার একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন কোর্চে ছাড় দেয় কোচিং সেন্টারটি। এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন নয়, বরং মুনাফা আদায় করাই কোচিং সেন্টারটির উদ্দেশ্য। এজন্য দেশের বিভিন্ন শাখায় কোচিং সেন্টারটি কোর্সগুলোতে নির্ধারিত আসনের থেকে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে।
পান্থপথ শাখার এক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি ৩০ জনের ব্যাচের একটি কোর্সে ভর্তি হলেও সেখানে একশ’র বেশি শিক্ষার্থী। অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর কারণে দাঁড়িয়ে ক্লাস করানো হয়। আবার ক্লাসে জানার জন্য প্রশ্ন করলেও অপমান করা হয়। শিক্ষকরা দায়সারাভাবে ক্লাস নেন বলেও অভিযোগ এসেছে।
লজ্জাস্কর ঘটনায় সমালোচিত কোচিং সেন্টারটি শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করতে ওয়েবসাইটেও ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।