সিলেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন - Dainikshiksha

সিলেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন

জিয়া আহমেদ |

১৮৭৪ সালে আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হলো বৃহত্তর বাংলার তিনটি জেলা সিলেট, কাছাড় ও গোয়ালপাড়া নিয়ে। খুব বেশি সময় যেতে না যেতে এই প্রদেশ পরিচিত হয়ে উঠল 'চা প্রদেশ' হিসেবে। রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি ও শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সিলেটের বাঙালিরা অনেক বেশি এগিয়ে ছিল আসামের মানুষের চেয়ে।

সিলেটের আসাম প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়া অনেক সিলেটি ও আসামিরা মেনে নিতে পারেনি; বিশেষ করে সিলেটি বাঙালিরা অনুভব করতে পেরেছিল আসামের সঙ্গে সিলেট একীভূত হওয়ার পেছনে কিছু উদ্দেশ্য ছিল, যা তাদের অর্থনীতি ও শিক্ষার বিকাশে অন্তরায় হতে পারে। তখনকার সময়ই আসামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যা নিয়ে হিন্দু-মুসলিম অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ ছিল।

তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী, যিনি আসাম আইন সভার সদস্য ছিলেন। চৌধুরী সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, 'আসামের জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, সিলেটিরা কেন সে খরচ বহন করবে আর সিলেটিরা কোন শর্তে সিলেটের পরিবর্তে আসামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সম্মত হবে।' সিলেট একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল।

তারপর একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য তাদেরকে লড়াই করতে হয়েছে মোটামুটি হলেও ৭০ বছরের অধিক। ১৯২১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, সে সময় থেকেই আসাম প্রদেশের মানুষজন, বিশেষ করে সিলেটের মানুষ একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল।

১৯২৫ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেও তা সফল করা যায়নি। ১৯৪০-এর পর তখনকার শিক্ষামন্ত্রী মুনাওর আলী 'শ্রীহট্ট বিশ্ববিদ্যালয়' নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন; কিন্তু কিছু অসমিয় প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবং তা নাকচ করে দেয়। ১৯৬২ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গেছে।

পূর্ব পাকিস্তানের এই অংশে (সিলেট) বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্বপ্ন বাস্তবে আসেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা যখন নিজস্ব ভূখণ্ড পেলাম, তখন আবারও উচ্চারিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। আশির দশকে জিয়াউর রহমান সিলেট সফরে এলে সিলেটবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের; কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।

শেষ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিলেটে এক জনসভায় ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা ও স্থান নির্ধারণ করে গঠিত কমিটি রিপোর্ট প্রদান করে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিলেট সফরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৯১  খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ফেব্রুয়ারি (১৩৯৭ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্কগ্দুন) তিনটি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ১২০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে শুরু হয় শাবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম।

২৮ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার এক যুগান্তকারী রোল মডেল হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে শাবিপ্রবি। ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ অল্প কয়েক মিনিটে শনাক্তকরণ, মোবাইলে খুদে বার্তায় ভর্তি প্রক্রিয়া, পিপীলিকা নামক বাংলা সার্চ ইঞ্জিন, ড্রোনসহ আরও অনেক যুগোপযোগী গবেষণার পথিকৃৎ শাবিপ্রবি।

শাবিপ্রবির ইতিহাসে সফলতম প্রশাসকের একজন বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। যিনি নিরলস পরিশ্রম করছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে যুগের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করা। বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সমস্যায় জর্জরিত ছিল; বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ সম্পাদিত হয়েছে বা হচ্ছে।

শাবিপ্রবিতে এখনও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক বিভাগ খোলা হয়নি; এর মধ্যে- ফার্মাসি, মাইক্রোবায়োলজি, আইন, সাংবাদিকতা, দর্শন, উন্নয়ন অধ্যয়ন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমান উপাচার্য আশা করি এদিকে নজর দেবেন। শুভ জন্মদিন ৩২০ একরের সবুজ ভূমি শাবিপ্রবি।

সহকারী অধ্যাপক,শাবিপ্রবি

সূত্র: সমকাল 

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052649974822998