সেই সব সবজান্তা পণ্ডিত - দৈনিকশিক্ষা

সেই সব সবজান্তা পণ্ডিত

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রচলিত অর্থে একজন পণ্ডিত হচ্ছেন ওই ব্যক্তি, যাঁর এক বা একাধিক বিষয়ে পাণ্ডিত্য আছে, বিষয় বা বিষয়াবলির ওপর কথা বলার মতো যোগ্যতা আছে এবং এই যোগ্যতা তিনি নিজের উদ্যোগেই অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পণ্ডিত বানাতে পারে না। পণ্ডিত হতে হলে কোনো ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল ইতিহাসখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন। ইমাম গাজ্জালি, আল ফারাবি, ইবনে খালেদুনের পাণ্ডিত্য নিয়ে এখনো দেশে দেশে অনেক গবেষণা হয়। নিঃসন্দেহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও রেবতি বর্মণ বা আরজ আলী মাতুব্বর, আধুনিককালের বড়মাপের পণ্ডিত ছিলেন। আজকাল সেই মাপের পণ্ডিত আর সৃষ্টি হয় না। কারণ একটি ভোগবাদী সমাজে পণ্ডিত সৃষ্টি হওয়াটা প্রায় অসম্ভব। পাণ্ডিত্য দূরে থাক, বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা কর্মজীবী তৈরি করা ছাড়া আর কিছুই তৈরি করে না। এক দল বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম কর্ণফুলী নদীটি কোথায়? যাদের এই প্রশ্ন করেছিলাম তাদের সংখ্যা ২০। কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ সেই স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের এই প্রজন্ম যাঁদের কাছে শিক্ষা নিচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের শিক্ষার্থীদের তা জানানোর প্রয়োজন মনে করছেন না। শিক্ষক যদি না জানান, তাহলে শিক্ষার্থীর পক্ষে তা জানা কঠিন। এই ঢাকা শহরের একটি স্কুল, মাসে ছাত্রপিছু বেতন দেড় লাখ টাকা। নিয়ম করেছে শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে উঠলে তাদের কাছে স্মার্টফোন থাকতে হবে। কারণ স্মার্টফোন না থাকলে স্মার্ট হওয়া যায় না। সেই স্কুল থেকে কখনো প্রজ্ঞাবান পণ্ডিত তৈরি হবে না। রোববার (১০ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, যে শিক্ষাব্যবস্থায় বা সমাজে সত্যিকার জ্ঞানের চর্চা হয় না, যে সমাজ জ্ঞানী সৃষ্টি করে না, সেই সমাজে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো খুবই সহজ, আর এ কাজটি করেন সমাজের উচ্চবিত্ত, দেশি-বিদেশি ডিগ্রিধারী, কেতাদুরস্ত ব্যক্তিরা। সাধারণ মানুষের কাছে তাঁরা খুবই সম্মানের এবং তাঁরা যা বলেন এবং যেভাবে তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তা সমাজের সাধারণ মানুষ অকপটে বিশ্বাস করে। বিশ্বব্যাংক দেশের মানুষকে জানাল, বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বাংলাদেশে এখন এক ধরনের পণ্ডিতের আবির্ভাব হয়েছে, যাঁদের বলা হয় ‘ফেসবুক’ বা ‘টক শো পণ্ডিত’। যে-ই না বিশ্বব্যাংক এ তথ্যটি দিল, সঙ্গে সঙ্গে এই পণ্ডিতরা সক্রিয় হয়ে উঠলেন এবং বিশ্বব্যাংকের বক্তব্যের সূত্র ধরে নিজেদের বক্তব্য হাজির করলেন। এত দিন পরও বাংলাদেশে এক-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিশ্বব্যাংক যদি তাদের বক্তব্যকে ঘুুরিয়ে বলত, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করে, তাহলে বিষয়টির উপস্থাপনা কিছুটা ইতিবাচক হতো। তবে এটি বিশ্বব্যাংকের কাজ নয়। তারা একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাদের কাজ হচ্ছে কিভাবে এবং কত উপায়ে বিভিন্ন দেশকে ঋণ গেলানো যায় তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। বিশ্বব্যাংকের এই তথ্য নিয়ে বেশ কয়েকজন ফেসবুক পণ্ডিত তাঁদের মন্তব্য দেওয়া শুরু করে দিলেন। এর সূত্র ধরেই দেশের বর্তমান সরকার, সরকারের উন্নয়ননীতি নানা বিষয়ে মন্তব্যে সয়লাব ফেসবুক। সাধারণত আমি এসব তর্কে পারতপক্ষে শামিল হই না। যখন দেখি যে মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে করা মন্তব্যে কোনো তথ্য মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে শুধু লিখলাম একটি দেশের উন্নয়নের চিত্র শুধু কোনো একটি সংস্থা, সেটি দেশি হোক (যেমন—সিপিডি বা সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো) বা বিশ্বব্যাংক বা আইডিবির তথ্য ও পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে না, করে আরো অনেক বাস্তব সূচক, এমনকি আমাদের চারদিকে দৃশ্যমান পরিবর্তনের ওপর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাস্তায় দাঁড়ালে দেখা যেত মজুরের গায়ে কাপড় নেই বা পায়ে নেই কোনো স্যান্ডেল। বর্তমানে তেমন একটা কি দেখা যায়? মনে রাখতে হবে, বাহাত্তরে আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি আর মাথাপিছু আয় ৭৭ মার্কিন ডলার, বর্তমানে সেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটিতে। সেই সাড়ে সাত কোটি মানুষকে খাওয়ানোর মতো খাদ্য উৎপাদন করার সামর্থ্য বাংলাদেশের ছিল না। বর্তমানে বাংলাদেশ শুধু নিজের দেশের মানুষের খাদ্য নিজেই উৎপাদন করে না, কোনো কোনো বছর সেই খাদ্যের কিছু অংশ বিদেশেও রপ্তানি করে। বাংলাদেশের প্রথম ৩০টি বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসত বিদেশি ঋণ ও অনুদান থেকে। চারদলীয় জোট সরকারের সময় পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্যারিসে বাংলাদেশের ঋণ ও অনুদানদাতাদের যৌথ সভার বাইরে বসে থাকতেন তাঁরা সভা শেষে কত টাকা দিয়ে ভিক্ষার ঝুলি ভর্তি করবেন, তা জানার জন্য। ঘোষণাটি এলে অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরে বাজেট তৈরিতে হাত দিতেন। একবার এই ঋণ আর অনুদানদাতারা বললেন, তাঁরা এবার ঢাকায় গিয়ে তাঁদের সভা করবেন। সরকারি মহলে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজস্ব বাজেট অনেক বড়, সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার মতো। তার প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থায়ন দেশি উৎস থেকে হয়। ৮ শতাংশ আসে ঋণ থেকে আর ২ শতাংশ অনুদান থেকে। উন্নয়ন বাজেটের একটি বড় অংশ বর্তমানে নিজস্ব উৎস থেকে জোগান দেওয়া হয়, তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ পদ্মা সেতু প্রকল্প।

কিন্তু বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভ্রান্তিকর সংবাদ নিয়ে আমাদের দেশের এক শ্রেণির ‘সবজান্তা শমসের’ পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনে এমন মাতম শুরু করেন, যেন দেশটি রসাতলে যাওয়ার বাকি আর কয়েক দিন। এ কাজ বেশি হয় যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে। সেদিন একটি টিভি টক শোতে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে একজন ছিলেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, একজন একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, পরবর্তীকালে ফ্লপ রাজনীতিবিদ, আর আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন সজ্জন ব্যক্তি। এই মুহূর্তে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হট ইস্যু হচ্ছে—দুর্নীতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অশান্তি, ছাত্রলীগ ইত্যাদি।

শুরুটা হয়েছিল দুর্নীতি প্রসঙ্গ দিয়ে। এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে বর্তমানে দেশে দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। এই দুর্নীতি দেশের আমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে ব্যাংকিং খাত, উন্নয়ন প্রকল্প, শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনৈতিক অঙ্গন—সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘মানুষ পায় সোনার খনি আমি পেয়েছি চোরের খনি।’ তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন এই চোরদের উৎখাত করতে, সফল হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত এই চোররাই তাঁকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবিরোধী জিহাদে অনেকটা একা ছিলেন। তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিহাদ ঘোষণা করেছেন, সেখানেও তাঁর সঙ্গে খুব বেশি মানুষ আছে বলে মনে হয় না। তবে তাঁর সঙ্গে দেশের আপামর জনগণ আছে—এটিই তাঁর জন্য বড় শক্তি।

সেদিন সেই ছাত্রনেতা আর ব্যর্থ রাজনীতিবিদ শুরু করলেন পদ্মা সেতুর মতো একটি তামাদি ইস্যু নিয়ে। শুরু করলেন ভারতের আসাম রাজ্যের ভূপেন হাজারিকা সেতু (আসল নাম ঢোলা-সাদিয়া সেতু) নিয়ে। এই সেতু লোহার বিম দিয়ে তৈরি, ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদ লোহিত নদের ওপর নির্মিত। সেতুটি তিনসুকিয়া জেলার দক্ষিণের ঢোলা গ্রামকে উত্তরের সাদিয়া গ্রামের সঙ্গে সংযোগ করেছে। এটি একটি সাধারণ সেতু, দৈর্ঘ্য ৯.১৫ কিলোমিটার। চলবে শুধু গাড়ি, তা-ও সেনাবাহিনীর গাড়ি আর ট্যাংক, যা মূলত যাবে ভারত-চীন সীমান্তে। বলা যেতে পারে, এটি মূলত ভারতের সামরিক যানবাহন পারাপারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, যদিও বেসামরিক যানবাহনও তা ব্যবহার করতে পারবে। ১৪৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ২০১৭ সালে খুলে দেওয়া হয়েছিল। পদ্মা সেতু নিয়ে যাঁরা একসময় নানা বিতর্ক সৃষ্টি করতে দেশে-বিদেশে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন তাঁরা এখনো সুযোগ পেলে তাঁদের পুরনো বক্তব্য নতুনভাবে তুলে ধরেন। সেই টিভি পণ্ডিত দুর্নীতি প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে আবার সেই তুলনা আনলেন। যখন আমি বলি, ভারতে একটি সেতু তৈরি করতে প্রয়োজনীয় মালামাল-যন্ত্রপাতি সব কিছু তাদের দেশেই পাওয়া যায়, যার জন্য তাদের উৎপাদন খরচ অনেক কম আর ভূপেন হাজারিকা সেতুর সঙ্গে পদ্মা সেতুর তুলনা হবে না। কারণ প্রথমত, পদ্মা বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদীই শুধু নয়, এটির গভীরতা, মাটির স্তর, পদ্মার নিচে আরেকটি মিনি পদ্মার অবস্থান, জটিল নদীশাসন, সেতুর সঙ্গে আবার রেল যোগাযোগের সংযোগ এবং সর্বোপরি এই সেতুতে ব্যবহার্য সব মালামাল দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা, সেতুর উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক, সেতুটি দুটি তলায় ভাগ করা, নিচের তলায় রেলপথ, ওপরে যানবাহন। দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। এসব যোগ করলে তার তুলনা কি ভূপেন হাজারিকা সেতুর সঙ্গে করাটা যথাযথ হবে? তখন আমার সঙ্গে সেই আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অনেকটা ব্যাকফুটে।

এমন অনেক তথ্য দিয়ে নিয়মিত দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কিছু মানুষ আর সংস্থা সব সময় প্রস্তুত হয়ে থাকে। অমুক দেশে এক কিলোমিটার সড়ক তৈরি করতে এত টাকা খরচ হয়, বাংলাদেশে কেন এর পাঁচ বা সাত গুণ বেশি? আরে ভাই, যে দেশের উদাহরণ টানেন তারা ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার ওপর ইট বিছাতে পারে। কারণ তারা তাদের এসব কাজের জন্য যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। এ কথাগুলো কেউ কিন্তু বলেন না।

দেশে দুটি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা সরকার যা-ই করুক না কেন, সেটি যে সরকারই করুক তার মধ্যে কখনো কোনো ইতিবাচক কিছু দেখে না। তাদের একটি সিপিডি আর অন্যটি টিআইবি। এরা আবার পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করতে কত না খেলা খেলেছে। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতি করতে যা যা করার প্রয়োজন, তারা সব সময় তা করতে ব্যস্ত থাকে। অন্য দেশেও এসব প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠান আছে, তবে সেসব দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের মূল্য একটি মুদি দোকানের সমানও না। বাংলাদেশের মিডিয়া ও এক শ্রেণির ‘সুশীল’ সমাজ ও সবজান্তা পণ্ডিত এদের বক্তব্য-বিবৃতিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। নভেম্বরের ২ তারিখ সিপিডি সংবাদ সম্মেলন করে দেশের মানুষকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ‘কেয়ামত নজদিক’। তাদের মতে, গত ১০ বছরের মধ্যে বর্তমান সময়ের মতো দেশে এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনো ছিল না। এখানে লক্ষণীয়, তারা গত ১০ বছরের কথা বলেছে, তার আগের সময়ের নয়। এই ১০ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, যা তাদের কথাবার্তায় মনে হতে পারে, যা তাদের কাছে অসহ্য। এই ১০ বছরে তারা যেদিকে তাকিয়েছে অন্ধকার দেখতে পেয়েছে। তাদের মতে, সরকার অর্থনীতি পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে, যা ভালো লক্ষণ নয়। তারা সরকার পরিবেশিত উপাত্ত নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে এবং বলে, সরকার দেশের যে প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান ৮ শতাংশ দিচ্ছে তা-ও সন্দেহজনক; যদিও শুধু সরকারের পরিসংখ্যান নয়, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অনেক গবেষকই বলছেন, বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার এশিয়ায় বর্তমানে সর্বোচ্চ। তাদের পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের দেওয়া পরিসংখ্যানের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। তাদের প্রশ্ন, দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না হলে দেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার কিভাবে বৃদ্ধি পায়। তারা কি ভুলে গেছে সরকারের বিনিয়োগ অনেকটা কাঠামোগত উন্নয়নে, যেমন—পদ্মা সেতু, সড়ক, সেতু, বন্দর। দেশের পণ্য উৎপাদন ও সেবা খাতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি। সরকারের কাজ বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সুবিধার জোগান দেওয়া। এসবের সঙ্গে আছে বিদেশি বিনিয়োগ আর কৃষিতে অনেক যুগান্তকারী উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। তারা ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা বলেছে, যেটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এই একই ব্যাংকিং সেক্টর যতটুকু সেবা দিচ্ছে তার কথা কেন বলা যাবে না। তাদের মতে, আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের ভারসাম্য বর্তমানে ঋণাত্মক (নেগেটিভ)। বিশ্বায়নের এই যুগে বাজেট ঘোষণার পরবর্তী তিন মাসের পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো দেশের অর্থনীতি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তা নিশ্চয় সিপিডি জানে। সংস্থাটির আরেকজন পণ্ডিত গবেষক জানালেন, সরকার অভ্যন্তরীণ আয়ের জন্য বেশি মাত্রায় প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু বলেননি বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে প্রত্যক্ষ কর কত শতাংশ বেড়েছে। তিনি হয়তো জানেন না, বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে পরোক্ষ কর অর্থনীতিতে কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সিপিডি কোথাও উল্লেখ করেনি বাংলাদেশের বর্তমান রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দীর্ঘ, যদিও তা বাড়ানোর আরো অনেক সুযোগ আছে। সিপিডি বা অনুরূপ আরো যেসব বেসরকারি সংস্থা আছে, তারা সব সময় ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারদর্শী। এক-এগারোর আগে এরা বেশ সক্রিয় ছিল ও এক-এগারোর মতো কোনো কিছু আসুক তার জন্যও বেশ সক্রিয় ছিল। আর যখন এলো তখন তাদের মধ্যে কেউ হলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, কেউ বা গেলেন জেনেভা বা নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রের দূত হয়ে। বর্তমানে তাঁদের হঠাৎ এসব অপতৎপরতা দেখে মানুষ মনে করতে পারে—কোথাও কি কোনো বদ আলামতের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে?

আবদুল মান্নান : বিশ্লেষক ও গবেষক।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040199756622314