পায়ে জুতা না থাকায় শিক্ষকের বকুনি ও ক্লাস থেকে বের করে দেয়ায় অভিমানে সিংড়া দমদমা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রিয়া খাতুন (১২) আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার দুপুরে সিংড়া পৌরসভার চক সিংড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। রিয়া চক সিংড়া মহল্লার গোলাম রাব্বানীর মেয়ে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষার্থী রিয়াকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হয়নি। এটা একটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আহসান ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে যান এবং ঘটনা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ দেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ওই ছাত্রীর পারিবারিক সূত্র জানায়, সিংড়া দমদমা বালিকা বিদ্যালয়ে অন্য দিনের মতো রোববার সকালে অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসেম্বলিতে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের মতো অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরাও ড্রেসের সঙ্গে জুতা পরে আসেনি। পরে সবাইকে পরবর্তী দিন থেকে ড্রেসের সঙ্গে জুতা পরে আসতে বলেন প্রধান শিক্ষক বিলকিস আক্তার বানু।
অ্যাসেম্বলি শেষে সবাই যে যার মতো ক্লাসে চলে যায়। পরে ওই স্কুলের শিক্ষক ষষ্ঠ শ্রেণির রিয়াসহ তিনজনকে বাড়ি থেকে জুতা পরে আসতে বলেন। শিক্ষার্থী রিয়া বাড়িতে গিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করে। পরে পরিবারের লোকজন ঘরের জানালা ভেঙে রিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে।
রিয়া খাতুনের সহপাঠী মাহফুজা খাতুন জানায়, প্রতিদিনের মতো সে আর রিয়া এক সঙ্গে স্কুলে যায়। জুতা পরে না যাওয়ায় রিয়াসহ তাদের ক্লাসের চারজনকে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং সোমবার জুতা পরে স্কুলে আসতে বলেন শিক্ষক। এ সময় রিয়া কান্নাকাটি করতে করতে বাড়ি চলে যায়।
রিয়ার পিতা গোলাম রাব্বানী বলেন, মেয়ে স্কুল থেকে চলে আসার কারণ জানতে চাই। মেয়ে বলে স্কুল ড্রেসের সঙ্গে জুতা পরে না যাওয়ার কারণে তাকে জুতা পরে স্কুলে যেতে বলা হয়েছে। আমিও মেয়েকে বলি তুমি জুতা পরে না গেলে তো স্কুল থেকে বের করেই দেবে, কেন জুতা পরে যাওনি। পরে মেয়ে নিজ ঘরে প্রবেশ করেই দরজা-জানালা আটকে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে ঘরের জানালা ভেঙে মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সিংড়া থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ছাত্রীর পরিবারের দাবি, স্কুল ড্রেসের সঙ্গে পায়ে জুতা না থাকায় শিক্ষকরা স্কুল থেকে তাকে বের করে দেয়ায় অভিমানে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আহসান জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।