চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে স্বপ্ন ভাঙছে অনেক শিক্ষার্থীর। বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পুনঃনিরীক্ষণে দেখা যাচ্ছে ফেল করা অনেক শিক্ষার্থী পাস করছেন। এমনকি জিপিএ-৫ পাচ্ছেন কেউ কেউ। অভিযোগ রয়েছে বোর্ড সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাব এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেই চলেছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন করতে গিয়ে প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে শিক্ষা বোর্ড। অথচ যেসব শিক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করে জিতছে তাদের অর্থ ফেরত দেয়া হচ্ছে না। আর যারা গাফিলতি করছেন তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হল- উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের উত্তরের নম্বর সঠিকভাবে দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে ওঠানো হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ১৮ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। এতে ৪০৯ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ৫৪ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ২ জনসহ নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০ শিক্ষার্থী। এছাড়া গ্রেড বেড়েছে ৩৩১ জনের। ২০১৭ সালের এইচএসসির ফল প্রকাশের পর পুনঃনিরীক্ষণ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩৩২ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেন ৫০ জন এবং জিপিএ-৫ পান ২৩ জন শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালেও ৩২৯ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।
নগরীর হালিশহর এলাকার জান্নাতুল মুনতাহা নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়নের ওপর তার ফল যেমন নির্ভর করে, তেমনি ভালো ফল না পেলে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে যায়। জীবনের লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়ে। দায়িত্বশীল পরীক্ষকের ওপর একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন নির্ভর করে।’ সূত্র জানায়, এ বছরের ১৯ জুলাই প্রকাশিত হয় এইচএসসির ফল। পরদিন থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা বোর্ডের নির্দিষ্ট নিয়মে ১৭ হাজার ৭৪০ শিক্ষার্থী আবেদন করে। এতে ৬১ হাজার ৬৯৯টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়। এর আগে গত বছরও ৪৭ হাজার ৭৯০টি উত্তরপত্রের জন্য ১৪ হাজার ৯৪৯ জন শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে সন্তুষ্ট না হয়ে ৫৫ হাজার ৮৭৯টি উত্তরপত্রের জন্য ১৪ হাজার ৯২৩ জন শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুব হাসান বলেন, ‘এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে দায়িত্বে অবহেলা করেছেন এমন পরীক্ষকদের ব্যাপারে শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ মাসের (সেপ্টেম্বর) শেষ দিকে সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে উত্তরপত্র মূল্যায়নে অবহেলার বিষয় ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষককে পরবর্তীতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন থেকে বিরত রাখা হয়।’
তিনি বলেন, জেএসসিতে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে স্কুল পর্যায়ের প্রায় ২০০ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সৌজন্যে: যুগান্তর