বরগুনা ২টি সরকারিসহ মোট ১৯২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোনটিতেই চারু ও কারুকলার শিক্ষক নেই। তাই শিক্ষার এ শাখায় জেলাজুড়ে চলছে সংকট । এ বিষয়টিতে ৩০ নম্বর রচনামূলক, ২০ নম্বর ছবি আঁকা, নকশা করা ও রং করা, সব মিলিয়ে পূর্নমান ৫০।
২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাধ্যমিক স্তরে বিষয়টি আবশ্যিক পাঠ্য পুস্তকরূপে নির্ধারিত করে শিক্ষামন্ত্রালয়। জেলার এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সর্বশেষ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় ১২ হাজার ২২৩ জন শিক্ষার্থী ৫০ নম্বরের চারু ও কারুকলা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা ছাড়াই পরীক্ষায় অংশ নেয়। অন্যদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষে গত ২ জানুয়ারি থেকে এসব বিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর নির্ধারিত শিক্ষক ছাড়াই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঠদান শুরু হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ৫০ নম্বরের এবং নবম ও দশম শ্রেণিতে ১০০ নম্বরের চারু ও কারুকলা বিষয় আবশ্যিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান জনবলকাঠামো অনুযায়ি চারু ও কারুকলা বিষয় অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ বিষয়ে এখনই কোন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। বড় শহরের বিদ্যালয় গুলোতে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যালয়ের নিজেদের অর্থে এ বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও ছোট শহর এবং গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়ের শিক্ষক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে জেলার হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি নতুন বিষয়ের কোনো শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করতে হলে শিক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, বামনায় ১৪ টি , বরগুনা সদরে ৫৭ টি , আমতলীতে ৪০ টি, তালতলীতে ১৫ টি , বেতাগীতে ৩৩ টি ও পাথরঘাটায় ৩৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এদের মধ্যে এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৫৮টি। বিদ্যালয়গুলো অন্য শিক্ষকদের দিয়ে বিষয়টির পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বোর্ডের অধীনে সর্বশেষ ২০১৫ সালের জেএসসি পরীক্ষায় ১৬৮৩ টি বিদ্যালয়ের ১০৯২৫৭ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। এদের মধ্যে বরগুনা জেলার ১৮২ টি বিদ্যালয়ের ১২২২৩ জন শিক্ষার্থী ছিল। এছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষে অষ্টম শ্রেণিতে রয়েছে ৯১ হাজার এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। বরিশাল বিভাগের ১২টি সরকারি বিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ সচেতন অভিভাবকেরা বিপাকে পড়েছেন।
বরগুনা কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান জানান, জেলা শহরের বিদ্যালয়গুলোতে চারুকারুকলার শিক্ষক না থাকলেও এ বিষয়ে তারা বাইরের শিক্ষকদের কাছ থেকে সামান্য কিছু ধারণা নিতে পারে কিন্তু গ্রামের শিক্ষার্থীদের সে অবকাশও নেই। এ কারণে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি।
বামনা সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এ.এস.এম হারুন-অর-রশীদ বলেন, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, তাই আশানুরুপ ফলাফল হয়নি। জেলার একাধিক প্রধান শিক্ষক এ বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করেছেন।
বরগুনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাছিনা বেগম জানান, কোনো রকম সাধারণ ধারণা দিয়ে আমরা আপাতত বিষয়টি চালিয়ে নিচ্ছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলিক কার্যালয় জানায়, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ১ হাজার ৬ শত ৮৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু ১২টিতে চারুও কারুকলার শিক্ষক রয়েছেন।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ শাহ আলমগীর বলেন, জেএসসি পরীক্ষায় চারু ও কারুকলা বিষয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে সংশ্লিষ্ট এমন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নে কোন সমস্যা হয়নি। আর শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবদুল হাকিম জানান, এ বিষয়টি নিয়ে বেশ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
বরগুনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুকুমার চন্দ্র হালদার জানান, বিদ্যালয়গুলোয় তুলনামূলক অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে এ বিষয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে। আশাকরি এ বিষয়ে পাঠদানে সমস্যা হবে না। শীঘ্রই এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে আশা করছি।