প্রাচীন ভারতভূমের ইতিহাস বিস্ময়কর। তার চেয়েও বিস্ময় ভারতের ভাষার ব্যাপক বৈচিত্র। সেই ভাষার কবরই খোঁড়া শুরু করেছিলেন প্রাক্তন অধ্যাপক গণেশ দেবী। উঠতে থাকে একের পর এক ভাষা। শেষ পর্যন্ত ৭৮০টি ভারতীয় ভাষা আবিষ্কার করে ফেলেছেন গণেশ দেবী। তাঁর কথায়, ‘শব্দের গহন অরণ্যে হাঁটার অনুভূতি।’
গুজরাটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। অবসর নিয়েই নামেন ভাষার সন্ধানে। শুধু হিমাচল প্রদেশেই ১৬টি ভাষার আবিষ্কার করেছেন তিনি। গবেষণা চালাতে গিয়ে দেখেন, হিমাচলে তুষারপাতকেই ২০০ রকম ভাবে বোঝানো হয়।
ভাষাবিদ হিসেবে কোনো প্রশিক্ষণ নেই গণেশ দেবীর। অধ্যাপনা শেষে স্থানীয় উপজাতিদের নিয়ে কাজ করতে প্রান্তিক গ্রামে যান তিনি। ঋণ, বীজ ব্যাংক পরিচালনা এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পে স্থানীয়দের সাহায্য করেন তিনি। এসময় ১১টি আদিবাসী ভাষা নিয়ে একটি জার্নাল প্রকাশ করেন।
মহারাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে গ্রামগুলিতে তিনি আবিষ্কার করেছেন, বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন পর্তুগিজ ভাষায় কথা বলেন ওই সব গ্রামের মানুষ। মায়ানমারের এথনিক কারেন ভাষায় কথা বলছেন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পূর্বের একাংশ। গণেশ আরো তাজ্জব হন, যখন আবিষ্কার করেন, গুজরাটের কিছু মানুষ জাপানি ভাষায় কথা বলেন।
ভারতীয়রা ১২৫টি বিদেশি ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন। ভারতে সবচেয়ে বেশি মানুষ হিন্দিতে (৪০ শতাংশ) কথা বলেন। বাংলায় ৮.০ শতাংশ, তেলেগুতে ৭.১ শতাংশ, মারাঠিতে ৬.৯ শতাংশ ও তামিলে কথা বলেন ৫.৯ শতাংশ।
অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ১২০টি ভাষায় অনুষ্ঠান হয়। সংসদে মাত্র ৪ শতাংশ ভাষার প্রতিনিধিত্ব করা হয়।
১৯৯৮ সালে এক উপজাতির স্থানীয় ভাষার ৭০০ কপি জার্নাল একটি অতিদরিদ্র উপজাতি গ্রামে নিয়ে যান তিনি। ১০ টাকা রেখে এগুলি কেনার জন্য একটি ঝুড়ি রাখেন সেখানে। দিনের শেষে দেখেন সব কপি শেষ, আর ঝুড়িটি ময়লা-দীর্ণ নোটে পূর্ণ।
দেবীর কথায়, ‘ঝুড়িতে দেখি গ্রামবাসীরা তাঁদের সামান্য আয় থেকে ময়লা অনেক নোট রেখে গিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের নিজস্ব ভাষাকে প্রথমবার লিখিত রুপে প্রকাশ পেতে দেখেছেন। দিন এনে দিন খাওয়া এই অশিক্ষিত লোকেরা যে জার্নালের জন্য টাকাগুলি দিয়েছেন, তা তাঁরা পড়তেও পারেন না। তখন আমি বুঝতে পারলাম ভাষার জন্য আদিম সেই গর্ব এবং ভাষার শক্তির বিষয়টি।’
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া