পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের অপসারণ চেয়ে লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিং করেছেন ওই কলেজের শিক্ষকরা। লিফলেট-পোস্টারে অভিযোগ হিসেবে অনিয়ম, দুর্নীতি, হয়রানি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ মে) সকালে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং এবং আগের দিন বৃহস্পতিবার লিফলেট বিতরণ করা হয়।
পোস্টারিংয়ে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলেও মিজানুর রহমান প্রতারণার মাধ্যমে চাটমোহর ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। কলেজটি সরকারিকরণের ঘোষণা হওয়ার পর গভর্নিং বডিকে না জানিয়ে আগের তারিখে রেজল্যুশন দেখিয়ে জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত ২২ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তিনি প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। নিজের স্ত্রী, বোন, শ্যালক, শ্যালিকা, চাচাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই-বোনদের নিয়োগ দিয়ে মেধাবীদের বঞ্চিত করেছেন। কলেজ মার্কেটের ২৮টি দোকানের জামানতের প্রায় ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তা ছাড়া কলেজের শতবর্ষী গাছ কেটে পাচার, ফুলবাগান বিস্তার ও পরিচর্যার নামে টাকা আত্মসাৎ; পরীক্ষার ফি ও ফরম পূরণ বাবদ সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত আদায় করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ; পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞান গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি ও ব্যবহারিক দ্রব্যাদি না কিনেও তিন লাখ ৫৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ; প্রশংসাপত্র বাবদ বোর্ডের নির্দেশনার বাইরে জনপ্রতি ৩৪০ টাকা হারে আদায়; শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রের নামে জনপ্রতি ১৪০ টাকা হারে আদায়; অনার্স শিক্ষার্থীদের সেমিনার ফি বাবদ জনপ্রতি চারশ টাকা হারে আদায়; পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র ফি বাবদ জনপ্রতি ১৫০ টাকা হারে আদায় এবং প্রতিবছর কলেজ লাইব্রেরির বই কেনার নামে মিথ্যা ভাউচার দিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান।
চাটমোহরের সর্ববৃহৎ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে পুঁজি করে অধ্যক্ষ কয়েক বছরে নিজের ও স্বজনদের নামে জমি, ভবন, মার্কেটসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। অধ্যক্ষকে অপসারণ করতে শিক্ষকরা সব স্তরের জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাটমোহর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কামাল মোস্তফা বলেন, ‘অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘এর আগে শিক্ষকদের করা লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তে শিক্ষকদের বেশির ভাগ অভিযোগেরই সত্যতা পাওয়া যায়। এই তদন্ত প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিলে তিনি তা মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পোস্টারিং-লিফলেট বিতরণের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’