বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের একজন কনস্টেবল বাবাকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষক কন্যা। পুলিশ কনস্টেবল পিতার এই মেধাবী কন্যা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজে প্রভাষক পদে কর্মরত। তিনি অভিযোগ করেছেন আইসোলেশনের নামে চিকিৎসাহীন রাখা হয়েছে তার পিতাকে। আবেঘণ চিঠিটি পড়ে যে কারো কান্না আসতে বাধ্য। তাঁর চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমার বাবা একজন সৎ,নিষ্ঠাবান পুলিশ কনস্টেবল। আগামী বছর অবসর নিতে যাচ্ছিলেন। বিগত চৌদ্দ বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগী। গত দশদিন যাবৎ সাধারণ সর্দি জ্বরে ভুগছেন । কোন চিকিৎসক পাওয়া যায় নি বলে সাধারণ জ্বরের ঔষধ চলছিল। থাকেন মিরপুর ১৪নম্বরের পুলিশ ব্যারাকে।চারদিন আগে তাকে কাছের শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজে দুই বেলা ডাক্তার দেখবেন এমন আশ্বাস দিয়ে আইসোলেসনে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোন চিকিৎসক কিংবা ঔষধের ব্যবস্থা নেই। কোন স্যাম্পল টেস্ট তো অনেক দূরের কথা।এদিকে বিগত দশ দিনেও করোনার কোন উপসর্গ যেমন গলা ব্যথা,তীব্র জ্বর,শ্বাসকষ্ট কিছুই বোঝা যাই নি।বরং হাত পা জ্বালা আর মাথা ভার এবং হালকা জ্বর অনুভব করছেন যা শুনে কেউ বলেন টাইফয়েড আবার কেউ বলেন ডায়াবেটিস বাড়ার লক্ষণ।কিন্তু সত্যিই কী হয়েছে তা আমরা জানি না।
অনেক চেষ্টা করে জানতে পারি প্রাতিষ্ঠানিক কোন কোয়ারিন্টাইনেই ডাক্তার বা ঔষধের ব্যবস্থা নেই। তাহলে কী আমার বাবা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চলেছেন?তবে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রিপোর্ট দেখে আশার আলো মনে উঁকি দিল। কিন্তু সরকারি কর্মচারী বলে তাকে তো যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। কেউ অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।
১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এক কোটির অধিক লোক কোয়ারিন্টিনে আছেন, তাদের মধ্যে এমন একজন মানুষ মারা গেলে কী এমন আসে যায়। কিন্তু ঐ একজন যে আমার বাবা। আমার আর আমার পরিবারের অনেক কিছু আসে যায়।
আমি যদি জানতাম যে উনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাহলে নিজেকে আর পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।কিন্তু এভাবে বিনা চিকিৎসায় সব শেষ হয়ে গেলে নিজেদের বোঝাবো কী করে?
একমাত্র উপায় হচ্ছে ওখান থেকে পালিয়ে আসা অথবা আত্মহত্যা করা।কিন্তু এ বয়সী একজন মানুষকে এমন অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া কতটা সমীচীন হচ্ছে সকলের কাছে প্রশ্ন।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন (তিনিও একজন মা,মানবতার মা) দয়া করেন আমার বাবার কী হয়েছে তা জানার ব্যবস্থা করার অনুমতি দিন, এভাবে ধুকে ধুকে তাকে শেষ হতে দেবেন না। নাহলে তাকে আমাদের পরিবারের কাছে এনে দিন। চিকিৎসায় করাতে না পারি তার সেবা করে অন্তত নিজেদের সান্ত্বনা দিই।এটা আপনার কাছে এক সন্তানের আর্তনাদ বাবাকে ফিরে পাওয়ার। আর এক বাবার বাঁচার আকুতি। এটাই আমার শেষ চেষ্টা।
নিবেদক
সাহেরা আকতার গিনি
প্রভাষক (৩৪তম বিসিএস),দিনাজপুর সরকারি কলেজ।