সনদ বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বন্ধ হওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা দেয়া হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে লেখা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে আপিলের তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আপিলের সিদ্ধান্তে রিটের প্রেক্ষিতে পাওয়া হাইকোর্টের আদেশবলে সনদ গ্রহণযোগ্যকরণ ও এমপিওসহ নানা সুবিধা পাওয়ার আশায় থাকা হাজার হাজার সনদধারীর আশাভঙ্গ হয়েছে। একটি পক্ষ খুব তৎপর হয়ে উঠেছিল সনদ গ্রহণযোগ্য করাতে।
মঙ্গলবার (২৯ মে) মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জিন্নাত রেহানা স্বাক্ষরিত চিঠিতে ‘হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিতের ব্যবস্থা গ্রহণসহ’ আপিল দায়েরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল উচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের প্রেক্ষিতে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সরকারি আদেশ জারীর পর শিক্ষার্থীদের সনদের বৈধতা চেয়ে আদালতে রিট করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের পরিচালক দাবিদার মাহমুদ আহমেদ। কতিপয় সনদধারীদের পক্ষে মাহমুদ আহমেদের করা রিটের প্রেক্ষিতে ২৫ ফেব্রুয়ারী দেয়া আদালতের রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে (www.diu-edubd.com) তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের সনদ বৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালত।
২০০৭ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আউটার ক্যাম্পাস বন্ধের নির্দেশ জারি করার পর হাইকোর্টে রিট করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে ২৯টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা সম্পর্কে স্থগিতাদেশ পেলে বিভিন্ন স্থানে ৩৩টি আউটার ক্যাম্পাস চালাতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। ওই স্থগিতাদেশের সুযোগে আরো তিনটি ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত তিনটি ক্যাম্পাস বিভিন্ন স্থানে ৩০০টিরও বেশি শাখা ক্যাম্পাস খোলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা সংকট, অনিয়ম-দুর্নীতি ও আউটার ক্যাম্পাসের মাধ্যমে সনদ বাণিজ্য বন্ধ করাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হককে প্রধান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি করে সরকার। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে সেই কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়, যাতে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সুপারিশ করা হয়।
২০০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৩টি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং এই নামে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, আইনের দৃষ্টিতে দারুল ইহসান কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নয়।