চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি-প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নেই বেসরকারি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ভারপ্রাপ্ত বা অনিয়মিত ভিসি কর্তৃক স্বাক্ষরিত অকার্যকর মূল সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য প্রায় আড়াইহাজার গ্র্যাজুয়েটকে ডাকা হয়েছে ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ১১তম কনভোকেশনে। ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়াতে বৈধ ভিসি নিযুক্তির পর এসব গ্র্যাজুয়েটদের ফের সনদ নিতে হবে। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত না হলে ভিসি-প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষরা অবৈধ বা বিধি মোতাবেক নিযুক্ত নন। আর ভারপ্রাপ্ত ভিসি থাকা অবস্থায় কনভোকেশন করতে পারেন না এবং মূল সনদে স্বাক্ষর করতে পারেন না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলমের চ্যান্সেলর কর্তৃক ভিসি নিযুক্ত হওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, তিনি বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের। আর বিধান অনুযায়ী এই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রযুক্তি অথবা বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের অধ্যাপককে ভিসি নিয়োগ করতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই বিধান জেনেই ভারপ্রাপ্ত ভিসি কাজী শরিফুল গং তড়িঘড়ি কনভোকেশন ডেকেছেন। বিধান অনুযায়ী কনভোকেশনের দিনে যিনি ভিসি থাকবেন তিনিই মূল সনদে স্বাক্ষর করবেন। সেই হিসেবে ভারপ্রাপ্ত ভিসি কর্তৃক স্বাক্ষরিত সনদ নিতে হবে প্রায় আড়ােইহাজার গ্র্যাজুয়েটকে। ফলে এই সনদগুলো অবৈধ হবে এবং এগুলো বাতিল করে নিয়মিত ভিসি নিয়োগ হলে তাকে দিয়ে ফের সনদগুলোতে স্বাক্ষর করাতে হবে। ততদিন গ্র্যাজুয়েটদের বৈধ সনদের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এদিকে গত ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠিতে আহছানউল্লাহসহ ২৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ৭০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি নিয়োগ দিতে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত সর্বশেষ ভিসি অধ্যাপক মো. সফিউল্লাহর মেয়াদ শেষ হয় গত আগস্টে। তিনি বুয়েটেরও সাবেক ভিসি ছিলেন। ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ারও অনেক আগে প্রোভিসির মেয়াদ শেষ হয়। তখন প্রতিষ্ঠানটির দু্ইবারের কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. কাজী শরিফুল আলমকে প্রোভিসির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি একই সাথে প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন কয়েকমাস। চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হয় গত মে মাসে। আগস্টে ভিসির পদটি শূন্য হলে কাজী শরিফুল আলম মুখে মুখে ট্রোজারারের পদ ছেড়ে দেন। অপর একজনকে নামমাত্র নিয়োগও দেন। তাকে বসার জন্য কোনও কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে জানায়, কাজী শরিফুল অদ্যাবধি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ফাইল সই করেন এবং প্রায় তিনলাখ টাকা বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নেন।
এদিকে, রাতারাতি শরিফুলকে ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব পালনের জন্য একটা আদেশ দেন তারই আপন ভাই এবং আহসান আহছানিয়া মিশন ট্রাস্টের সভাপতি ও আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল আলম। মোটকথা বিশ্ববিদ্যালয়টির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকার নিযুক্ত কেউ নেই। যারা আছেন তারা থাকা না থাকা সমান কথা।
জানা যায়, গত আগস্টে নিয়মিত ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত ভিসি পদে আছেন ড. কাজী শরিফুল আলম। বিধান অনুযায়ী নতুন ভিসির জন্য বিধান অনুযায়ী তিনজনের নাম পাঠাতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে। কিন্তু তা না করে তড়িঘড়ি কনভোকেশন আয়োজন করা হয়। আগামী ২৭ অক্টোবর (রোববার) অনুষ্ঠিতব্য কনভোকেশনে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন বাণিজ্যমেলার মাঠে এদিন বিকেল ৩টায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বিধান অনুযায়ী শিক্ষামন্ত্রীকে কনভোকেশনের যাবতীয় তথ্য জানানোর দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার। কিন্তু একজন বিতর্কিত অতিরিক্ত সচিব ও একজন উপসচিব এবং একজন কর্মচারীর যোগসাজশে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে কনভোকেশনে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর মূলসনদ পাচ্ছি। প্রোভিশনাল সার্টিফিকেট নিয়ে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়েছে এতদিন। কনভোকেশনে পাওয়া সনদ নিয়ে ফের ঝামেলা মেনে নেয়া যাবে না। অকার্যকর সনদ দিতে এত আয়োজন। ভারপ্রাপ্ত ভিসি বা সরকারের খাতায় অবৈধ ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলম পদটি টিকিয়ে রাখার জন্য এ রকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তার স্বাক্ষরিত সনদ যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে চাকরি ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। এরফলে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হবেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফি দিয়ে সবাই ডিগ্রি অর্জন করেছি।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলম ২৪ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী কনভোকেশন করতে যাচ্ছি। শিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। সুতরাং কনভোকেশন অবৈধ বা সনদ অবৈধ বা আমাকে অবৈধ বলা যাবে না।’
আগামীকাল আসছে আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের ‘পর্ন কাহিনী’ নিয়ে প্রতিবেদন। চোখ রাখুন দৈনিক শিক্ষায়।