ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। অষ্টম পর্ব - দৈনিকশিক্ষা

ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। অষ্টম পর্ব

মাছুম বিল্লাহ |

বাস্তব জীবনে আমাদের অনেক কিছু লিখতে হয় অফিসিয়াল কারণে, কোনো ডকুমেন্ট রাখার নিমিত্তে এবং  নিজেকে প্রকাশ করার জন্য। আমরা যারা পড়াশুনা করছি বা পড়াচ্ছি বা চাকুরি করছি তারা সবাই পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছি, সার্টিফিকেট অর্জন করেছি, আর এসব পরীক্ষার প্রধান অংশই ছিল লিখিত। আমাদের লেখাই আমাদেরকে পরিচিত করিয়েছে পরীক্ষকদের কাছে, চাকরিদাতাদের কাছে, তাই নয় কি?

একজন শিক্ষক ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রীদের হয়ত চিনেন না, কিন্তু পরীক্ষার খাতা পরীক্ষণের সময় কোনো একটি ভালো খাতা পেলে সেই ছাত্র বা ছাত্রীকে ওই শিক্ষক চিনে রাখেন বা চিনে ফেলেন। এভাবে ভালো কিছু লেখার দক্ষতা আপনার একটি অমূল্য সম্পদ।
আরও পড়ুন:  ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। ষষ্ঠ পর্ব

আপনি যখন কোনো একটি লেখা পড়েন তখন দেখা যায় অধিকাংশ বিষয়ই আপনার জানা বা পরিচিত, আপনি হয়ত তখন মন্তব্যও করে ফেলেন ‘এতে নতুন কিছু নেই, এ বিষয়গুলো তো আমিও জানি’ ইত্যাদি। কিন্তু ওই সাধারণ বিষয়গুলোই সাজিয়ে লিখতে পারাটা অনেক বড় কাজ। 

আপনি হয়ত চিন্তা করছেন, ভাবছেন কিন্তু লিখছেন না। যিনি লিখেছেন তিনি কিছু একটা সৃষ্টি করেছেন এবং পাঠকের সামনে, মানুষের সামনে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। লেখার দক্ষতা বাড়ানোর উপযুক্ত সময় হচ্ছে ছাত্র জীবন, কারণ এ সময়ে বাধ্য হয়ে অনেক কিছু লিখতে হয়। 

শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখার দক্ষতা বৃদ্ধিতে উৎসাহ যোগানো, সহায়তা করা, ক্লু দেওয়া, লেখা উন্নত করার পথ বাতলে দেওয়া। শিক্ষার্থীরা যাতে নিজ থেকে লেখার জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, সাথে সাথে তাদের ধারণার এবং চিন্তার প্রসার ঘটাতে পারে শিক্ষকদের সে সকল বিষয়গুলোতে সব সময়ই সচেষ্ট থাকা প্রয়োজন।

লেখা একটি প্রাথমিক ভিত্তি যার দ্বারা আপনার কাজ, শিখন এবং বুদ্ধিবৃত্তি বিচার করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মস্থলে এবং আপনি যেখানে বাস করছেন। লেখা বলে দিচ্ছে আপনি কী ধরনের ব্যক্তি অর্থাৎ আপনার চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি আপনার দর্শন প্রকাশ পাচ্ছে আপনার লেখার মধ্যে। লেখার দক্ষতা স্থায়ী এবং আপনার সাথে সাথেই থাকে। লেখা আপনার অবস্থান পাঠককে বলে দিচ্ছে। একজন পাঠক একটি জটিল বিষয় হয়ত ভালোভাবে বুঝতে পারছেন না, আপনার লেখা তা প্রকাশ করে দিচ্ছে, সহজ করে দিচ্ছে। তৈরি করছে আপনার  এবং পাঠকদের  মাঝে সেতুবন্ধন ।
লেখা আপনার ধারণাগুলোকে পরিশুদ্ধ ও পরিশীলিত করছে। আপনি লিখিত আকারে যখন কোনো ‘ফিডব্যাক’ কাউকে দিচ্ছেন সেটি তখন পরিশীলিত। লেখা আপনাকে বলে দিচ্ছে আপনার পাঠক কী চাচ্ছে অর্থাৎ আপনার  চিন্তন ক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্লেক্সিবিলিটি এবং ম্যাচিউরিটি প্রকাশ পায়।

আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। পঞ্চম পর্ব

লেখা আপনাকে উজ্জীবিত করে, আপনি মনে মনে যা ভাবছেন তারও বাইরে যেতে। দেখবেন আপনি একটি বিষয় লিখে ফেলেছেন, পড়ে দেখবেন আপনি যে চিন্তা করেছিলেন তার চেয়েও ভালো হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গায় এবং সময়ে কতটা সত্য এবং বাস্তবতা প্রকাশ করতে পেরেছেন তারও প্রকাশ এই লেখায়। সর্বোপরি বলা যায়, লেখার  দক্ষতা  আপনার  চাকরি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানের জন্য দরকার।

আরও পড়ুন:  ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। চতুর্থ পর্ব

কীভাবে বাড়াতে হবে লেখার দক্ষতা
অনেক শিক্ষার্থীই মনে করে আমাদের ভাষাজ্ঞান কম, অতএব আমরা লিখতে পারছি না। ভাষাজ্ঞান কম এটি একটি সত্য কথা কিন্তু সেই ভাষজ্ঞান যতটা না বাধা তার চেয়ে বড় বাধা হচ্ছে কোনো কিছু লিখতে ধারণা বা চিন্তার ক্ষমতা না থাকা। যেমন একজন শিক্ষার্থীকে ‘পরিবেশ বিপর্যয়’ নিয়ে কিছু লিখতে বলা হলো, দেখা যাবে সে বইপত্র খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে। 

বই খোঁজাখুঁজি করা খারাপ নয় যদি অতিরিক্ত কিছু ধারণা সেখান থেকে নেয়ার থাকে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা যা করে  তা হচ্ছে ওই বইয়ে যা লেখা আছে তার পুরোটাই মুখস্থ করে লিখে ফেলে। এতে নিজের যে ধারণাগুলো ছিল সেগুলোকে প্রকাশ করার সুযোগ দেয়া হলো না, নিজের ভাষা ব্যবহার করার যে সুযোগ তৈরি হলো সেটিও হতে দেওয়া হলো না।

আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। তৃতীয় পর্ব

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে শিক্ষকগণও শিক্ষার্থীদের নিজের লেখার কোনো গুরুত্ব দেন না বা মূল্যায়ন করেন না। নিজে লিখতে গেলে কিছুটা ভুল ভ্রান্তি হতে পারে, শিক্ষককে সেগুলো বুঝে ক্রিয়েটিভিটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমি ছাত্রছাত্রীদের প্রচুর উৎসাহ দিতাম যাতে নিজেরা কিছু লিখতে পারে, কেন লিখবে নিজে, কী উপকার হবে ইত্যাদি বুঝিয়ে দিতাম। তারপরেও কিছু কিছু শিক্ষার্থীদের উত্তর, ‘স্যার, এত কষ্ট করে লাভ কী? বইয়ে তো ভালো করে লেখা আছে। হুবহু ওইটি লিখে দিলেই তো অনেক নম্বর পাওয়া যায়, ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কম।’

আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। দ্বিতীয় পর্ব

অন্য এক শিক্ষার্থীর উত্তর, ‘স্যার, নিজে লিখতে গেলে তো অনেক ভুল হয়,  নিজে লিখে দেখেছি স্যাররা নম্বর দেন না, বরং ভুল হওয়ার জন্য প্রচুর বকাঝকা করেন।’ এখানে একটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে। অনেক শিক্ষক নিজেরা সৃজনশীলতার চর্চা করেন না, শিক্ষার্থীদের চর্চা করতেও উৎসাহ দেন না। করলে নিরুৎসাহিত করেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। এই অভ্যাস আমাদের পরিহার করতে হবে।

আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। প্রথম পর্ব

জীবনে ক্যারিয়ার তৈরি করতে এবং লক্ষ্যে পৌঁছুতে লেখার দক্ষতা অর্জন করা দরকার। মনে রাখতে হবে লেখা ভাব আদান-প্রদানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আমাদের কথা আমরা দূরবর্তী মানুষের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য লেখার মাধ্যমে রেখে যাই বা পৌঁছাতে পারি। আমরা জীবনে সবাই বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি এবং এখনও হতে হয়। পরীক্ষার  বিরাট অংশটাই থাকে লেখা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের লেখার দক্ষতা প্রদর্শন করতে হয়। আর তার মাধ্যমে জীবনের পরবর্তী অংশের সাফল্য ও ব্যর্থতাও নির্ণিত হয়। লেখার দক্ষতা  না থাকলে  ভুল তথ্য সংযোজিত হয়, কর্তৃপক্ষের  নিকট উল্টো প্রমাণিত হয় আমাদের যোগ্যতা। লেখার মাধ্যমে আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে আপনি কে? কি বলতে চান? আপনি উপস্থিত নেই কিন্তু আপনার লেখা আপনাকে সবার কাছে পরিচিত করাবে। অতএব আসুন আমরা লেখার অভ্যাস গড়ে তুলি।

লেখার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে। কোনো বিষয়ে  ধারণা নেওয়ার জন্য আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে, এতে ওই বিষয়টি সম্পর্কে  আপনার চিন্তার প্রসার ঘটবে। সাথে সাথে আপনার  ভাষাগত  দুর্বলতাও কেটে যাবে। আপনি একটি লাইন বা দুইটি তথ্য উপস্থাপন করতে চান আপনার লেখায় কিন্তু কীভাবে লিখবেন বুঝতে পারছেন না, বিভিন্ন সূত্র থেকে পড়া আপনাকে এ বিষয়ে সাহায্য করবে। (সূত্র গুলো হচ্ছে বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্র, গল্পের বই, ক্লাস, শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপচারিতা, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আলাপচারিতা, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ, ইন্টারনেট ইত্যাদি। আমাদের চারপাশের বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা আমাদের লেখার উপকরণ সংগ্রহ করতে পারি।
চলবে......

লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত 

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032670497894287