গাইবান্ধা জেলায় কলেজ পর্যায়ের উপবৃত্তির টাকা উঠাতে (ক্যাশ করতে) গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। ডাচ-বাংলার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীর তালিকাভুক্ত মোবাইল নম্বরে টাকা গেছে। কিন্তু আবার অনেক শিক্ষার্থী তাদের অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা পাননি বলে দৈনিক শিক্ষার কাছে অভিযোগ করেছেন। গত সপ্তাহে সরজমিনে গিয়ে ডাচ্ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এন্ড এজেন্ট ব্যাংকিং গাইবান্ধা শাখায় অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভিড় দেখা যায়। অথচ উপবৃত্তির টাকা বিতরণের শর্তের মধ্যে এটা পড়ে না। ব্যাংকের শাখায় শিক্ষার্থীদের ভিড় মানেই সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সার্ভিস দিতে রকেটের ব্যর্থতার অকাট্য প্রমাণ।
সাদুল্যাপুর ভাতগ্রাম হাইস্কুল এন্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন, পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাবাড়ী কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রুমি খাতুন, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালি স্টেশন আলিম মাদরাসার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান, লক্ষীপুর স্কুল এন্ড কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা আকতারসহ আরও অনেকে এই অভিযোগ করেন।
আরো পড়ুন: ডাচ-বাংলার উদাসীনতায় পরীক্ষকদের সম্মানীর টাকা প্রতারকদের হাতে
এছাড়া সাদুল্যাপুর ভাতগ্রাম হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাসেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘অ্যাকাউন্টে টাকা আছে কিন্তু ক্যাশ আউট হচ্ছে না। একই মোবাইল নম্বরে দুজনের অ্যাকাউন্ট, আবার কোন কোন শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্ট ইনএক্টিভ দেখায়।’ একই অভিযোগ করেছেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বিপ্লব, রোকন, চামেলী ও তৌহিদ।
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলার ৫ হাজার ৯৩৭ জন কলেজ শিক্ষার্থীর জন্য বিগত ছয় মাসের উপবৃত্তি বাবদ মোট ৯৯ লাখ টাকা ছাড় করে সরকার।
রকেটের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে ভাতগ্রাম হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সোলাইমান আজিজ দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গাইবান্ধা মোবাইল ব্যাংকিং ডাচ্ বাংলা অফিসে যেতে বলেছি। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ টাকা ক্যাশ করতে পারছেন। তবে, ভুলক্রমে একই নম্বরে দুটি অ্যাকাউন্টে হওয়ার তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরবর্তীতে সংশোধনী ফর্ম আসলে তা ঠিক করবেন বলে জানান।
ডাচ্ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এন্ড এজেন্ট ব্যাংকিং গাইবান্ধা শাখার ডিস্ট্রিক ম্যানেজার (সি,এম)অমল কুমার বিশ্বাস দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, যথাসময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট খোলার কাগজপত্র জমা না দেওয়া, পিন কোড ভুলে যাওয়া, শিক্ষার্থীরা ভুল পিন কোড দিয়ে বার বার চেষ্টা করার কারণে টাকা ক্যাশ করতে পারছেনা।
অমল কুমার দাবি করেন, ‘যে সকল শিক্ষার্থী ডাচবাংলার অফিসে এসে পিন কোডের অভিযোগ দেয় তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধান করার চেষ্টা করি। আর যাদের অ্যাকাউন্ট আছে ক্যাশ করতে পারছে না তাদের কাছ থেকে পুনরায় ফরম পূরণ করে হেড অফিসে পাঠাচ্ছি, ৭২ ঘন্টার মধ্যে ক্যাশ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছি।’
উপবৃত্তির টাকা উঠানো নিয়ে হয়রানির জন্য অভিভাবক সৈয়দ আলী, ইয়াকুব আলী, আব্দুল্লাহ, শাহিদা বেগম কলেজ ও রকেট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতাকে দায়ী করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘উপবৃত্তির টাকা ক্যাশ করতে দুর্ভোগের কথা শুনেছি। তবে বিষয়টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সমাধান করবে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।
আরো পড়ুন: উপবৃত্তি বিতরণে ডাচবাংলার ব্যর্থতা, যেমন দেখলেন পরিচালক
৮৮ হাজার শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা গোপন রেখেছে ডাচবাংলা
বিড়ম্বনার আরেক নাম ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপবৃত্তি বিতরণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাশ কাটিয়ে ডাচ-বাংলাকে দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তির দায়িত্ব
ডাচ-বাংলা ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের ৩৫ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ, উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ