একটা বাংলা প্রশ্ন করতে পারে না, শিক্ষা বোর্ড চালায় কীভাবে : ড. জাফর ইকবাল - দৈনিকশিক্ষা

একটা বাংলা প্রশ্ন করতে পারে না, শিক্ষা বোর্ড চালায় কীভাবে : ড. জাফর ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

‘যারা বাংলার বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে একটা প্রশ্ন করতে পারেন না, তারা শিক্ষা বোর্ড চালান কেমন করে? গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেয়ায় অভিযুক্তদের লজ্জা-শরম নেই, কিছুদিন পরপরই তারা এটা করেন।’ দৈনিক শিক্ষাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিনে সোমবার (৩ জানুয়ারি) বাজারি গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন। এছাড়া এমসিকিউ অংশের একাধিক প্রশ্নের রয়েছে একাধিক উত্তর। এতে বিভ্রান্ত হয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। এছাড়া নতুন ও পুরাতন সিলেবাসের প্রশ্ন নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকরা। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

আবারো ভুল প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা

গতকাল ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭০ নম্বরের সৃজনশীল। আর ত্রিশ নম্বরের এমসিকিউ। ৭০ নম্বরের সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে ৪০ নম্বরই হুবহু বাজারি গাইড বই থেকে তুলে দিয়েছে।  অথবা অন্যভাবে বলা যায়, ৪০ নম্বরের প্রশ্ন তিন/চার বছর আগের অন্য শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নের সাথে প্রায় মিল। যা হওয়ার কথা নয়। এছাড়া এমসিকিউ অংশের কয়েকটি প্রশ্নের রয়েছে একাধিক উত্তর। ভুল প্রশ্নও রয়েছে। এতে বিভ্রান্ত হয়েছে পরীক্ষার্থীরা। তারা ক্ষতিগ্রস্থ। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এসব চিত্র উঠে আসে।

দৈনিক শিক্ষার কাছে বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকাটিকে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তাদের লজ্জা-শরম নেই, বারবার একই ঘটনা ঘটাচ্ছেন তারা। যারা বাংলার মতো একটি বিষয়ে প্রশ্নপত্র নিজের যোগ্যতায় করতে পারেন না, তারা শিক্ষা বোর্ড চালান কেমন করে, এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

উল্লেখ্য, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষকরা নানা তদবির ও ফন্দিফিকির করে শিক্ষাবোর্ডগুলো পদায়ন পান।  

গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন 

আরও পড়ুন : গাইড থেকে হুবহু প্রশ্নে এসএসসির বাংলা পরীক্ষা, আছে ভুলও

আবারো ভুল প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিক্ষোভ

বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে হাজার কোটি টাকা লোন করে চালু করা সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতা বাড়ানো এবং মুখস্থবিদ্যা ও গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরতা কমানো। এ কারণে পাঠ্য বইয়ে প্রশ্ন দেয়া থাকে না। যে নমুনা প্রশ্ন থাকে তাও তুলে দেয়া যায় না। প্রশ্ন উদ্ভাবন করতে হয়। এ কারণে এক পরীক্ষার প্রশ্ন আগের কোনো পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে মিলবে না। কোনো গাইড থেকেও প্রশ্ন কমন পড়বে না। কিন্তু বারবারই এমন ঘটনা ঘটছে।

গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন 

গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া প্রশ্নপত্রের এ বিষয়ে বোর্ডের কর্মকর্তাদের মতামত জানতে চাইলে গতানুগতিক জবাব দেন। জবাবগুলো এমন: না এটা হতে পারে না। বোর্ড কর্মকর্তারা তো প্রশ্ন করেন না। এমনকি কর্মকর্তারা প্রশ্ন দেখতেও পারেন না। তবু, কারা এই প্রশ্ন করেছে তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া হবে ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলে থাকেন। 

গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দেয়ার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের জেএসসি পরীক্ষায়ও গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দিয়ে জেএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় যেখানে বাজারি প্রশ্ন কিংবা গাইড বই থেকে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ, সেখানে বোর্ডের প্রশ্ন গাইড বইয়ের সঙ্গে হুবহু মিলে গেলে শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। ওই প্রশ্নটি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তৈরি হয়েছিল বলে জানা যায়। তৎকালীন কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখায় কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে সম্প্রতি বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এই চেয়ারম্যান নিজে আরবি পড়তে, বলতে ও লিখতে পারেন না। 

এর আগে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এইচএসসির ইংরেজি প্রশ্নপত্র ও এসএসসির পদার্থ বিজ্ঞানের ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্র হুবহু গাইড বই দেখে তৈরি করলে দেশব্যাপী হইচই শুরু হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ও এস এস মাহমুদকে দিয়ে কমিটি তৈরি করা হলেও সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। কারণ ওই প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা। এছাড়া তদন্ত ধামাচাপা দিতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন তো ছিলই। সেই সময়ে ঢাকা বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা শ্রীকান্ত চন্দ্র চন্দ ও শাহেদুল খবীর চৌধুরী বর্তমানে যথাক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি কলেজ শাখা উপসচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক।   

বছরের পর বছর ধরে প্রশ্নফাঁসের তথ্য চেপে রাখা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নোট ও গাইড বইয়ের ব্যবহার ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দেয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘গাইড বই থেকে প্রশ্ন করলে চাকরি থাকবে না, এমপিও বন্ধ হয়ে যাব।’ কিন্তু গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দেয়ার সময় কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখায় থাকা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সেই কর্মকর্তা বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। আর যারা প্রশ্ন তৈরি ও মডারেশন করেছেন তাদের কাউকে খুঁজে বের করেনি মন্ত্রণালয়। 

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে গাইড বই থেকে রাজশাহী বোর্ডের প্রশ্ন প্রণয়নের অভিযোগে এমপিও বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া হয় দুইজন বেসরকারি কলেজ শিক্ষকের। তারা হলেন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার আরআইএম ডিগ্রি কলেজের ফিন্যান্স বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহ প্রবীর মিত্র ও একই জেলার চৌহালী উপজেলার চৌহালী ডিগ্রি কলেজের ফিন্যান্সের প্রভাষক মমতাজ বেগম।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.008124828338623