প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারের বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের বিষয়টি সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয় হইয়াছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বর্ষের শুরুতে একই দিনে নূতন পাঠ্যপুস্তক লাভ করায় তাহাদের আনন্দের আর সীমা থাকে না। কয়েক বত্সর ধরিয়া এইভাবে আমাদের দেশে পালন করা হইতেছে পাঠ্যপুস্তক উত্সব। নূতন বত্সরে নূতন পাঠ্যপুস্তকের গন্ধে শিক্ষার্থীরা এই সময় থাকে মাতোয়ারা। ইহা তাহাদের শিক্ষাজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলিতেছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু নূতন পাঠ্যপুস্তক সংরক্ষণ নিয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি একধরনের সংকেট রহিয়াছে। বর্তমানে প্রথম শ্রেণি হইতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩৬ কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপা হইতেছে। এই বিপুল পাঠ্যপুস্তক কয়েক মাস রাখিবার জন্য এনসিটিবির পর্যাপ্ত জায়গা বা নিজস্ব সংরক্ষণাগার নাই। সাধারণত বিতরণের এলাকাগুলোর বই স্থানীয় দুই-একটি স্কুলে রাখা হয়। সেখান হইতে নির্দিষ্ট স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হয়। কিন্তু জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলো এখন নিজেদের প্রয়োজনীয় বই ছাড়া পার্শ্ববর্তী স্কুলের বই সংরক্ষণ করিতে চাহে না। প্রতি বত্সর বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা বাড়িতেছে, বাড়িতেছে ছাপার পরিধিও। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক সংরক্ষণের সংকট দূর হইতেছে না। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, প্রতি বত্সর আগস্ট হইতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় পাঠ্যবই সংরক্ষণ করিতে হয়। কিন্তু কোনো স্কুলই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগে বই নিতে চাহে না। তাহলে মুদ্রণকৃত বই এতদিন কোথায় রাখা হইবে? জেলা ও উপজেলার সরকারি হাইস্কুল এখন আর এই ব্যাপারে আগ্রহ দেখাইতেছে না। আবার বর্তমানে এনসিটিবির ঢাকার তেজগাঁও ও টঙ্গীতে দুইটি নিজস্ব গুদামে বই মুদ্রণের কাগজ রাখা হইতেছে। সেখানে বই রাখিবার জায়গা নাই। দেখা যায়, প্রতিবারই ৩ থেকে ৫ শতাংশ বই বেশি ছাপা হইতেছে। প্রাথমিক স্তরের জন্য বাফার স্টকের (আপত্কালনীন মজুত) জন্য ৪-৫ শতাংশ বই বেশি ছাপা হইতেছে। এই বাড়তি বই সংরক্ষণের সংকটও প্রকট। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াইয়া দেখাইবার কারণে সব মিলাইয়া প্রতি বত্সর প্রায় ৫০ হইতে ৬০ লক্ষ কপি বই অব্যবহূত থাকে। দীর্ঘ সময় ধরিয়া স্কুলগুলি এই বই আর সংরক্ষণ করিতে চাহে না। আবার আগাম বই না ছাপিলেও বিপদ আছে। মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কারসাজি করিয়া এনসিটিবিকে বেকায়দায় ফেলিয়া দিতে পারে। ইহাতে একই দিনে একই সঙ্গে বই উত্সব পালন করা এবং সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করাও অসম্ভব হইয়া পড়িতে পারে। বই মুদ্রণের গুণমান ধরিয়া রাখাও হইতে পারে কঠিন।
সারাদেশে প্রায় সাড়ে তিন শত সরকারি হাইস্কুল রহিয়াছে। এইসব স্কুলে পাঠ্যপুস্তক সংরক্ষণের পরিধি বাড়ানো দরকার। ইহা ছাড়া এনসিটিবি এই সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৯-১০ সালে প্রতি উপজেলায় একটি করিয়া গুদাম তৈরির উদ্যোগ নিয়াছিল। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই সংকটের অবসান হইতেছে না। আমরা মনে করি, প্রতি উপজেলায় এনসিটিবির নিজস্ব গুদাম গড়িয়া তোলার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাহার পরও বাড়তি বই থাকিলে তাহা সরকারি স্কুলগুলোতে রাখিবার ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করি আমরা।