এমফিল-পিএইচডির জন্য অন্যের গবেষণা চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে। চুরিতে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়সহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আমলারা। উচ্চশিক্ষার বিষয়াদি দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের স্থায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ-দূনীতির অভিযোগ বিস্তর। তাই মনিটরিংও হয় না তেমন একটা। কমিশনের একজন সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আর সচিবের ওই পদ পেতে মরিয়া প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘুষ নিয়ে দুদকের অনসুন্ধান ও গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া জামান নামের একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত ছিলেন ভুয়া পিএইডি ডিগ্রি বিক্রির সঙ্গে। গবেষণা প্রবন্ধ চুরিতে এগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় কয়েকবছর আগে। সেই শিক্ষক এখন গাজীপুরের একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য। টকশোতেও নীতিকথা বলেন তিনি।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের গবেষণায় চুরির ঘটনাটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগের পর আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আরেকজনের গবেষণা থেকে তথ্য-উপাত্ত নেয়ার নিয়ম আছে। গবেষণায় একনাগাড়ে সর্বোচ্চ ২৫ শব্দ বা ৪-৫ বাক্য ব্যবহার করা যায়। এজন্য তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে হয়।
অন্যদিকে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সবকিছুই হাতের নাগালে থাকায় গবেষকরা খুব সহজেই ইন্টারনেট থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
কিন্তু বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে তা নেই। ফলে নিয়ম জানা না থাকা কিংবা নীতিমালার অভাবে ভার্চুয়াল জগত থেকে নেয়া বিষয়গুলো গবেষণা চুরির মধ্যে পড়ে।
প্লেজিয়ারিজম ডিগ্রি বাতিলের পাশাপাশি চাকরি চলে যাওয়ার মতো অপরাধ। এমন ঘটনায় কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নূরউদ্দীন আলোর পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল ও চাকরিচ্যুত করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম ঘটনা। কিন্তু সমাজকল্যাণ বিভাগের এক অধ্যাপক শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ে টিকে গেছেন। এবং তিনি এখন গাজীপুরের একটি বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক বছরে অন্তত ৫টি প্লেজিয়ারিজমের ঘটনা ধরা পড়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় অবশ্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা আরেকজনের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ আলোচিত হচ্ছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের একজন প্রভাষকের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র্র্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস এ অভিযোগ করার পর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়।
ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীরের পিএইচডি গবেষণার ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠেছে। সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাস নিলসন এক চিঠিতে এ অভিযোগ আনেন।
এছাড়া ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন, নুসরাত জাহান এবং বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে।
দেশে বর্তমানে শুধু ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে গবেষক ভর্তির অনুমতি আছে।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, গবেষণায় প্লেজিয়ারিজম ধরার লক্ষ্যে সফটওয়্যার স্থাপনের কথা ভাবছে ইউজিসি।