ওসির রুমে আসামির মৃত্যু : হত্যা না আত্মহত্যা? - দৈনিকশিক্ষা

ওসির রুমে আসামির মৃত্যু : হত্যা না আত্মহত্যা?

বরগুনা প্রতিনিধি |

বরগুনার আমতলী থানায় হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন এক আসামির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

থানায় স্বজনদের আহাজারি | ছবি : বরগুনা প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) ভোরে থানা হাজতে মারা যান সানু হাওলাদার (৫৫) নামে ওই আসামি। সোমবার (২৩ মার্চ) রাতে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাবাদের নামের থানায় আটক রাখার তিন দিন পর তার মৃত্যু হয়।

সানুর মৃত্যু নিয়ে তার স্বজন ও পুলিশ দুই রকম কথা বলছেন। পুলিশের দাবি, সানু থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষের ফ্যানের সাথে রশি বেঁধে আত্মহত্যা করেছে।

অন্যদিকে স্বজনদের দাবি, গ্রেফতারের পর তিন লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা না দেয়ায় সানুকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে পুলিশ। নিহত সানু হাওলাদার আমতলী উপজেলার পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামের হযরত আলীর ছেলে।

এ ঘটনায় বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রী ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফকে দায়িত্ব অবহেলার কারণ দেখিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। একইসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেড কোয়ার্টার মহররম ও সহকারী পুলিশ সুপার আমতলী ও তালতলী সার্কেল মো. রবিউল ইসলাম।

নিহত সানুর পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর ইব্রাহিম নামের একজনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যা মামলার এজাহারে নিহত সানু হাওলাদারের সৎ ভাই মিজানুর রহমান হাওলাদারকে আসামি করা হয়। ওই আসামির ভাই সানু হাওলদারকে গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সহেন্দভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমতলী থানা পুলিশ আটক করে।

সানুর ছেলে মঙ্গলবার থানায় এসে তাকে খাবার নিয়ে যান। তবে বুধবার পরিবারের লোকজন এসে সানু হাওলাদারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি। উল্টো পরিবারের লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করে তার স্বজনরা। বৃহস্পতিবার সকালে থানা থেকে খবর দেয়া হয় সানু হাওলাদার ওসি তদন্তের কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

ওসির রুমে ঝুলন্ত লাশ | ছবি : বরগুনা প্রতিনিধি

সানুর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ সোমবার রাতে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসাবে আটক করে। তাকে আটকে রেখে দফায় দফায় নির্যাতন করে পুলিশ। বুধবার রাতে পুলিশের নির্যাতনে সানু মারা গেলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা গলায় রশি লাগিয়ে ওসি তদন্ত মনোরঞ্জন মিস্ত্রীর কক্ষে ঝুলিয়ে রাখে।

নিহত শানুর স্ত্রী ঝরনা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তার স্বামীকে সোমবার রাতে বাড়ি থেকে আটক করে আমতলী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঝরনা থানায় স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। পরে ১০ হাজার টাকা দেন ঝরনা। দাবিকৃত বাকি টাকা দিতে না পারায় তার স্বামীকে থানা হাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত সানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিনা অপরাধে আমার বাবাকে ওসি ধরে এনে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছে। আমি ওসির দাবি করা টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার বাবাকে নির্যাতন করেছে। বাবার ওপর নির্যাতন যাতে বন্ধ হয় সেজন্য মঙ্গলবার দুপুরে আমি ওসিকে ১০ হাজার টাকা দেই। কিন্তু টাকায় ওসি তুষ্ট হয়নি। নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। বুধবার সকালে আমি বাবার সঙ্গে দেখা করতে থানায় আসি। কিন্তু আমাকে দেখা করতে না দিয়ে ওসি আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি গালাগাল করে তাড়িয়ে দেয়। ওসি বলে, টাকা নিয়ে আস, তারপর দেখা করতে দেবো।

আমতলী উপজেলার গুলিশালালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সানু হাওলাদারকে বাড়ি থেকে ধরে এনে নির্যাতন করেছে। আত্মহত্যার ঘটনা পুলিশের সাজানো।

আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান অভিযোগ করেন, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে সানুকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।

আমতলী থানার ওসি আবুল বাশার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সানুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সানু হাওলাদার বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য বলে। সে ওয়াশ রুমে থেকে ফিরে এসে এক ফাঁকে হাজত খানার ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

কিন্তু হাজতখানায় কোনও ফ্যান নেই সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পূর্বের কথা পাল্টে বলেন, ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জনের কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। টাকা না দেয়ায় তাকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জবাব এড়িয়ে যান।

ঘটনার তদন্তকারী বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন ও অপরাধ মো. তোফায়েল আহম্মেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই মো. আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ টাকা না পেয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067539215087891