কঠোর পরিশ্রমেই সফলতা - দৈনিকশিক্ষা

কঠোর পরিশ্রমেই সফলতা

সা’দ আল জামানী, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি |

Milonমানবজন্ম সৃষ্টির জন্য। যদি মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারি, তবেই জীবনের সফলতা। কারো জন্য কিছু করতে হলে প্রথমে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতে হবে। আর সফলতার জন্য কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। কথাগুলো “প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক” পাওয়া মো. মিলন হোসেনের।

মিলন হোসেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ২০১১ সালে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরুপ সম্প্রতি তাকে এ পদক প্রদান করা হয়। তিনি বর্তমানে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সময়টা তখন ২০০৬। নিজের ভেতর রাজ্যের হতাশা। কারণ কি পড়বেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। অনেকগুলো নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। অবশেষে ভর্তি হন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। সব হতাশা ধুয়েমুছে পড়ালেখা শুরু করেন মিলন। প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল বিভাগে প্রথম হওয়া। প্রথম সেমিস্টারে প্রথম হতে না পারলেও আর কোন সেমিস্টারে তাকে দমাতে পারেনি কেউ। কঠোর পরিশ্রমে অন্য কাউকেই অতিক্রম করতে দেননি নিজের ফলাফলের সীমানা। নিজের ভাল ফলাফলের সিংহভাগ কৃতিত্বই মায়ের অবদান বলে জানান তিনি। মিলন বলেন, মা যে আমার কতটা খেয়াল রেখেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। আমি থাকতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে আর মা বাড়ি থেকে পরীক্ষার সময় কিছুক্ষণ পর পর ফোন করে খোঁজ নিতেন – যেন পরীক্ষার চিন্তা আমার চেয়ে আমার মায়েরই বেশি।

বিভাগের সবার প্রিয় ছাত্র ছিলেন মিলন। স্যারদের উৎসাহ বিশেষভাবে কাজ করেছে তার ভাল ফলাফলের পেছনে।  তিনি বলেন, আসলে কাকে রেখে কার কথা বলব, স্যাররা প্রত্যেকেই আমার জন্য যথেষ্ট করেছেন। প্রতিনিয়ত দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের পাশাপাশি বন্ধুদের ভূমিকাও ছিল ব্যপক। বিশেষ করে সুদীপ্ত, মাওলা, শশী, মিলুসহ সবাই আমাকে অনেক অনেক সাহায্য এবং অনুপ্রাণিত করেছে। তবে বেশি মনে পড়ে স্কুলের এক বন্ধুর কথা “মিলন তুই চেস্টা করলে সব পারবি”। সেই কথাটা মনে রেখে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছি আর অবশেষে সফল হয়েছি,বললেন মিলন।

মিলনের ছোটবেলা কাটে মাগুরা জেলার শতপাড়া গ্রামে। এসএসসি পাস করেছেন শালিখা থানা হাই স্কুল আর এইচএসসি পাস করেছেন ড. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপাল কলেজ থেকে। মা গৃহিণী আর বাবা ছোট ব্যবসায়ী। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনিই বড়। ক্রিকেট তার প্রিয় খেলা। অবসর পেলেই সিনেমা দেখতে বসে যান। যদিও অবসর পান না বললেই চলে। খুব ব্যস্ত থাকেন বলে বন্ধুরা কেউ তাকে যান্ত্রিক, কেউবা রোবট বলে ডাকতো।

স্কুলে ভাল ছাত্র হিসেবে সুনাম ছিল মিলনের। বন্ধুরা কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, কেউ মেডিক্যাল কলেজে চান্স পায়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরও অনেক আশা নিয়ে ভর্তি হন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা প্রথমেই তাকে হতাশায় ফেলে দেয়। সেক্ষেত্রে বাবা-মার উৎসাহই আশা জোগায় তাকে। তারা বললেন, যেখানে ভর্তি হয়েছ সেখানেই ভাল করে পড়, দেখবে জীবন পাল্টে যাবে।

সেই মিলনই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব। একাধারে তিনি বিভাগের সেরা ছাত্র এবং ২০০৫-০৬ সেশনের সব বিভাগের মাঝে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ধারী। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বের হওয়া ব্যাচগুলোর ভেতর রেকর্ড ফলাফল তারই। জীবনে সবসময় পড়াশোনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব¡ দিয়েছেন। নিজে নিজেই নোট করে পড়তেন তিনি।

জুনিয়র শিক্ষার্থীদের কাছেও প্রিয় এই মুখটি। কোন কিছু বুঝতে না পারলেই সবাই মিলে দৌড় দিতেন মিলন ভাইয়ের রুমে। তার সুবিধা অসুবিধা দেখার ফুসরত নেই, তাদেরকে এ টপিক্স বুঝিয়ে দিতেই হবে। অনেক কঠিন বিষয় তিনি এমন ভাবে বুঝাতেন,পরক্ষণেই শিক্ষার্থীরা বলে উঠতেন এ তো পানির মতো সোজা।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে গবেষক হবার। স্বপ্নটা মলিন হয়নি বড় হয়েও। তার খুব ইচ্ছা টেক্সটাইলের উপর আরো উচ্চ শিক্ষা নেবার। ভবিষ্যতে এ বিষয়েই গবেষণা করার আকাঙক্ষা তার। তিনি ইতোমধ্যে টেক্সটাইল কম্পোজিট ও মেডিকেল টেক্সটাইল নিয়ে কাজ শুরু  করেছেন।

তিনি ইন্ট্রামেক্স গ্রুপে নিটিং এবং উইভিং-এ প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে এবং ‘দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ এ খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে কর্ম জীবনের শুরু করেন।

মিলন ইফ্লোয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ও উইভিং এর উপর থিসিস করেছেন সম্পূর্ণ নিজের ভালোলাগা থেকেই। পাশাপাশি টেক্সটাইলের শিক্ষার্থীদের সহায়ার্থে বিষয়ভিত্তিক বইও লিখেছেন।

জীবনের লক্ষ্য ছিল শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করা। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। যে শিক্ষার্থীর বেঞ্চে বসে মিলন র্দীঘদিন ক্লাস লেকচার শুনেছেন, আর এখন সে বেঞ্চগুলোতে বসে অনেক শিক্ষার্থী মিলনের ক্লাস লেকচার শুনতেছেন।


এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033318996429443