‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় যা আছে সেভাবেই ঘোষণা করো। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পরেও করা যাবে। দেশের মানুষের কাছে তথ্য গোপন করতে পারব না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাও। আমি তোমাদের সাথে আছি।’
রোববার (৮ মার্চ) দেশে প্রথমবারের মতো তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর এ তথ্য জানার পর এমনিভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত ও নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে রোববার সকালে স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সম্পর্কে অবহিত করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। সে সময় কেউ কেউ কয়েকটা দিন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত তথ্য গোপন করে আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের পর ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাব করলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা সরাসরি নাকচ করে দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, অনুষ্ঠানের চাইতে দেশের মানুষের ভালোমন্দ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা শনিবার (৭ মার্চ) রাতেই ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফলে ইতালি ফেরত প্রবাসী দুজনসহ মোট তিনজনের করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন।
এ খবর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব (সেবা বিভাগ) আসাদুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদকে জানান আইইডিসিআর পরিচালক ডা. মীর জাদি সাবরিনা ফ্লোরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার সকালে সাক্ষাতের সময় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। এ সময় স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাতীয় অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল রয়েছেন। আইইডিসিআরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং হয় সে সম্পর্কেও তিনি জানেন।
দেশে তিনজন করোনা ভাইরাসের রোগী পাওয়া গেছে, এ তথ্য প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার পর বিকেলে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দুজন ইতালি প্রবাসীসহ তিনজনের করোনভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার তথ্য গণমাধ্যমকে অবহিত করেন আইইডিসিআর পরিচালক।
এর আগে, রোববার নারী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে। এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যেকোনো জায়গায় সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিদিন করোনাভাইরাসসংক্রান্ত নির্দেশনা দিচ্ছে। আমি অনুরোধ করব সকলকে সেই নির্দেশনাবলি মেনে চলার।’
করোনাভাইরাস সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
এরপরই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পাঁচ ধরনের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যা করণীয়
- ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে
- হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ না করা
- হাঁচি–কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা
- অসুস্থ পশু বা পাখির সংস্পর্শে না আসা
- মাছ, মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরুরি প্রয়োজনে ছাড়া চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। এমনকি প্রয়োজন ছাড়া এই সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। তবে সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে কী না এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে এখনই তারা কিছু ভাবছেন না। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সব ধরনের সতকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব, তবে এখনই প্রাথমিক স্কুল বন্ধের কথা ভাবছি না’
আরও পড়ুন :
করোনা : কি করব-কি করব না, সঠিক তথ্য কোথায় পাবো ?
করোনা ভাইরাস : বুঝবেন কীভাবে, যাবেন কোথায়?
করোনা ভাইরাস : বিশ্বে সাড়ে ৬ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা !
অর্থনীতি ও শিক্ষা খাতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব
করোনা : বিশ্বজুড়ে ছড়ানোর নতুন শঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
করোনা ভাইরাস : ছড়ানোর কারণ স্পষ্ট নয়, ডাব্লিউএইচওয়ের উদ্বেগ
করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ডব্লিউএইচও’র পরামর্শ