ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি। ব্রিটেনে এই নিয়ে তিনজন প্রাণ হারালেন করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট কভিড-১৯ রোগে। তবে প্রাণঘাতী এই রোগটিতে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু হলো।সংক্রমণ ধরা পড়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় রোববার ম্যানচেস্টারের এক হাসপাতালে তিনি মারা যান।
মৃত বাংলাদেশির ছেলে বলেন, প্রতি বছরের শুরুতে আমার বাবা ইতালিতে বেড়াতে যেতেন দুই-তিন সপ্তাহের জন্য। এটা তার একটা প্রিয় বেড়ানোর জায়গা। কারণ, বহু বছর তিনি ইতালিতে ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইতালি যান।
তিনি বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগে আমরা পাকাপাকিভাবে ব্রিটেনে চলে আসি। আমরা থাকি ম্যানচেস্টারের কাছে। কিন্তু আমার বাবা ইতালিতে বেড়াতে যেতে পছন্দ করতেন। আমরাও প্রতি বছর গ্রীষ্ফ্মে পরিবারের সবাই মিলে সেখানে বেড়াতে যেতাম। তবে বাবা প্রতি বছরের শুরুতে নিয়ম করে বেড়াতে যেতেন ইতালিতে তার পুরোনো শহরে। এ বছরও গিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তিনি সেখানে যান। তখনও ইতালিতে করোনাভাইরাস এত ব্যাপকভাবে ছড়ানোর কথা শোনা যায়নি। কিন্তু তিনি যে দুই সপ্তাহ ইতালিতে ছিলেন, তার মধ্যেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়। ব্যাপকভাবে সেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
ছেলে জানান, ২৯ ফেব্রুয়ারি তার বাবা ব্রিটেনে ফেরেন। তখনও তিনি সুস্থ। তিন দিন পর সব যেন ওলট-পালট হয়ে যায়। তার বাবার বয়স ছিল ৬০ বছর। তার নানা ধরনের অসুস্থতা ছিল, যা নিয়ে তিনি বেশ ভুগছিলেন। কোলেস্টেরল, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট। তবে এসবের পরও তিনি মোটামুটি ভালোই ছিলেন।
গত ৩ মার্চ বাড়ির কাছের হেলথ সেন্টারে যান তার বাবা। তখন ডাক্তার এবং নার্সরা তাকে জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি মাস্ক পরে আছেন। তিনি বললেন, মাত্র দু'দিন আগে তিনি ইতালি থেকে এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাকে আলাদা করে ফেলা হলো। নর্থ ম্যানচেস্টার জেনারেল হাসপাতাল থেকে একটা জরুরি দল চলে আসে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার সঙ্গে তাদের সে দিনই শেষ দেখা। তারা বুঝতে পারেননি যে কোনোদিন তার সঙ্গে আর দেখা হবে না।
তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রথম কয়েকদিন তিনি বেশ ভালোই ছিলেন। তারপর ডাক্তাররা বলছিলেন, তার রক্তে যথেষ্ট অক্সিজেন যাচ্ছে না। তার হার্টবিট অনিয়মিত। এভাবেই চলছিল কয়েকদিন। তারপর রোববার তিনি মারা যান।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা সবাই ভালো আছি। আমাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ নেই। আমরা এক সপ্তাহ এ অবস্থায় আছি। আরও এক সপ্তাহ থাকতে হবে। আমরা যেহেতু আইসোলেশনে আছি, তাই আমার বাবার জানাজা বা দাফন কোনো কিছুই করতে পারছি না।