বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত ও আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনের মূলভূখণ্ডের বাসিন্দা, এ দেশটিরই উহান শহরে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিনে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। তারপর থেকে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও এখন চীনে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) সোমবার দেশটিতে করোনাভাইরাসে নতুন করে মাত্র ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে। এক কী দুই মাস আগে সেখানে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার জনের মতো ছিল।
ভাইরাসটির সংক্রমণজনিত রোগ কভিড-১৯ এ এদিন ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনাগুলো সব হুবেই প্রদেশে ঘটেছে। সোমবার পর্যন্ত চীন করোনভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা ৩ হাজার ১৩৬ জনে ও মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
চীনের বাইরে বিশ্বের অপরাপর দেশ ও অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ৮৮২ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ২৫৫ জনে পৌঁছে গেছে। চীনসহ বিশ্বব্যাপী মোট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ১৮ জনে ও আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৯ জনে পৌঁছেছে।
চীনে সোমবার কভিড-১৯ আক্রান্ত আরেকজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে, অপরদিকে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকায় উহানের অধিকাংশ অস্থায়ী হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পর প্রথমবারের মতো উহান পরিদর্শন করেছেন।
চীনের পরিস্থিতি উন্নতি হলেও এখন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও জার্মানির মতো বিশ্বের অন্যান্য অংশেই বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতালিতে। নতুন রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় পুরো দেশে চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে ইতালির সরকার। এর ফলে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পড়া দেশটির সাড়ে ছয় কোটি মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ দশার মধ্যে পড়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ইতালিতে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩৬৬ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে নয় হাজার। চীনের মূল ভূখণ্ড বাদ দিলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ইতালিতেই সবচেয়ে বেশি।
সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩১ জন, এতে দেশটিতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫০০ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে এদিন তিনজনের মৃত্যু হওয়ায় এখানে মৃতের সংখ্যা ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানিয়েছে।
চীন ও ইতালির পর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইরানে, ২৩৭ জন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মৃতের সংখ্যা একদিনে বেড়েছে ৪৩ জন।
বিশ্বের সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত ফ্রান্সে ৩০, স্পেনে ২৮, যুক্তরাষ্ট্রে ২৬, জাপানে ১৬, ইরাকে ৭, যুক্তরাজ্যে ৫, হংকংয়ে ৩, অস্ট্রেলিয়ায় ৩, জার্মানিতে ২ ও ফিলিপিন্স, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, মিশর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও কানাডায় একজন করে মারা গেছেন।