কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা : আচার্যের কথাও মানছে না বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো - দৈনিকশিক্ষা

কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা : আচার্যের কথাও মানছে না বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হচ্ছেন আচার্য বা রাষ্ট্রপতি। সেই হিসাবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কয়েক বছর ধরেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এমনকি তিনি এ বিষয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সমন্বিত পদ্ধতিকে আরো সহজ করে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আচার্যের সেকথার মূল্যই দিচ্ছে না বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

জানা যায়, এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরূপ সিদ্ধান্তে মাঝারি সারির আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিধায় ভুগছে।

পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে না আসার ঘোষণা দেয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘আমরা চলতি বছর কেন্দ্রীয় ভর্তিতে আসছি না। এই পদ্ধতি এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এবার যেহেতু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই কেন্দ্রীয় ভর্তিতে আসছে, তাই তাদের দেখে আমরা আগামী বছর সিদ্ধান্ত নেব।’

তবে ইউজিসির সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় না এলেও চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর আমাদের আগে থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে শঙ্কা ছিল।’

ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ‘সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা ছিল। অভিভাবক-শিক্ষার্থীরাও সমন্বিত বা কেন্দ্রীয় ভর্তি চায়। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়তে হয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা চালু আছে। এখন যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় না আসার ঘোষণা দিয়েছে, তারা জনগণের ইচ্ছার কোনো মূল্য দিল না।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় না আসার অন্যতম কারণ ফরম বিক্রি বাণিজ্য। এই খাত থেকে প্রতিবছর বহু কোটি টাকা আয় করে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এর বড় অংশই শিক্ষকরা ভাগ করে নেন নানা খাত ও সম্মানী দেখিয়ে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় এলে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওই খাতের আয় অনেকাংশেই কমে যাবে। তবে শিক্ষার্থীদের দুর্দশা লাঘব হবে। 

জানা যায়, গত বছর থেকে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তির বিষয়ে কাজ শুরু হয় জোরেশোরে। গত বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবার সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে শুরুতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় ইউজিসি। কিন্তু শুরুর দিকে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব উপাচার্য বৈঠকে অংশই নেননি।

এরপর উপাচার্য পরিষদের সভায় সমন্বিত পদ্ধতির বদলে কেন্দ্রীয় পদ্ধতির প্রস্তাব আসে। তাতে সায় দেয় ইউজিসিও। সমন্বিত ভর্তিতে একজন শিক্ষার্থীকে একবারে বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করে দেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভর্তি অনেকটা আইএলটিএস, টোফেল বা বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মতো। এর মাধ্যমে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক তিনটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে শিক্ষার্থীদের। এই কেন্দ্রীয় পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটা স্কোর দেয়া হবে। এরপর স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদামতো স্কোরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। তবে শিক্ষার্থীদের তখন নতুন করে আর লিখিত পরীক্ষায় বসতে হবে না।

জানা যায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে সর্বশেষ সভা করে কেন্দ্রীয় ভর্তির ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়। তাঁরা তখন একমত পোষণ করলেও একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। ইউজিসি তাঁদের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। এর এক দিন আগেই গতকাল নাগাদ পাঁচ বড় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তিতে না আসার ঘোষণা দেয়। কেন্দ্রীয় পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আজ বুধবার বৈঠকে বসবে ইউজিসি।

নাম প্রকাশ না করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবেই সব কিছুতে বুয়েটকে অনুসরণ করি। একদিকে ইউজিসিকে বলেছি আমরা থাকব, আবার বুয়েট না আসার ঘোষণা দেয়ায় আমরাও সমস্যায় রয়েছি।’

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম তখনো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে একাধিকবার বৈঠক করেছি। আসলে ক্লাস্টারভিত্তিক পরীক্ষা হলেই ভালো। গত বছরও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা একত্রে হয়েছিল। কিন্তু এবারের কেন্দ্রীয় ভর্তিতে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় যখন আসতে চাইছে না, আমার মনে হয় তারা নিজেদের মতো করেই পরীক্ষা নিক। তবে এতগুলো পরীক্ষা না নিয়ে বুয়েটের মতো একটা পরীক্ষা নেয়া উচিত। আর এবার যেহেতু কেন্দ্রীয় ভর্তিতে ৩০ থেকে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আসছে, তাই এবার ইউজিসি সফল হলে হয়তো আগামীতে বাকি পাঁচটিও আসবে।’

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034430027008057