কোনও নির্দিষ্ট স্কুল থেকে নয়, প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ভিকারুননিসার সদ্য বরখাস্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। শিক্ষাজীবনের চারটি পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে তিনটিতে দ্বিতীয় বিভাগ এবং শুধু এসএসসিতে প্রথম বিভাগ পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান নাজনীন ফেরদৌস। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে এমপিও সুবিধাও নেন অবৈধভাবে।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, নাজনীন ফেরদৌসের জন্ম ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগ পেয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। এসএসসির সনদে লেখা রয়েছে, ‘রোল-ঢাকা নম্বর ম বিউ৭৪৭৯৬, প্রাইভেট পরীক্ষাথিনী হিসেবে ১৯৭৮ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হইয়াছে।’ দেখা যাচ্ছে, মূল সনদটিতে পরীক্ষার্থীনী বানানটাই ভুল লেখা হয়েছে। মূল সনদের কপি দৈনিক শিক্ষার হাতে রয়েছে।
এর আগেও তিনি একবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই পরীক্ষার বছর ও ফলাফল জানা যায়নি। তিনি ভিকারুন নিসা স্কুলে পড়েননি বলে জানা যায়।
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ভিকারুননিসা নূন কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি’তে পান দ্বিতীয় বিভাগ নাজনীন। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে সরকারি জগন্নাথ কলেজ থেকে পরিসংখ্যানে দ্বিতীয় বিভাগে বিএসসি অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে পরিসংখ্যানে এমএসসি পাস করেন তিনি। কিন্তু ভিকারুননিসা স্কুল বার্ষিকী নূন প্রবাহতে (২০১৫-১৮) নাজনীন সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা দেখুন নীচের এই ছবিতে:
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে ভিকারুননিসা কলেজে যোগ দেন নাজনীন ফেরদৌস। তৎকালীন অধ্যক্ষ হামিদা আলী তার নিয়োগপত্র দেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে এমপিওভুক্ত হন নাজনীন। তবে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া ও বেতন স্কেল পেতে তিনি যে আবেদন করেছিলেন ২০১২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে তা নাকচ করে দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অর্থাৎ মাউশি অধিদপ্তরের বিবেচনায় এই সহকারী অধ্যাপক হওয়ার যোগ্য নন নাজনীন। প্রভাষক হিসেবে তার এমপিওশিটে গোঁজামিল থাকায় মাউশি অধিদপ্তর তার সহকারী অধ্যাপকের আবেদন নাকচ করলেও রহস্যজনকভাবে তিনি সহকারী অধ্যাপকের স্কেল ভোগ করেন। নাকচ করে দেয়া অধিদপ্তরের আদেশের কপি ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো হয়। মাউশি অধিদপ্তরের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (কলেজ) মো: জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই আদেশের কপিতে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা খানমের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ও স্কেল পাওয়ার আবেদনটিও নাকচ করা হয়। নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহননের পর নাজনীনকে বরখাস্ত ও এমপিও স্থগিত এবং ফৌজদারি মামলা দেয়া হয়। বর্তমানে নাজনীন পলাতক। স্কুল কর্তৃপক্ষ হাসিনা খানমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই নিয়োগ পান নাজনীন ফেরদৌস। আর স্কুলটির নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় তাকে বরখাস্ত করা হয় গত ৫ ডিসেম্বর। মন্ত্রণালয় থেকে তার এমপিও স্থগিত করতে বলা হলেও নভেম্বর মাসের এমপিও ইতিমধ্যে ব্যাংকে চলে যাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে যাতে নাজনীন টাকা তুলতে না পারেন।