ক্যাসিনোর টাকায় মাদরাসার বিশাল ভবন বানাচ্ছেন পাগলা মিজান - দৈনিকশিক্ষা

ক্যাসিনোর টাকায় মাদরাসার বিশাল ভবন বানাচ্ছেন পাগলা মিজান

মুরাদ মজুমদার |

ক্যাসিনোর টাকায় মাদরাসার বিশাল ভবন বানাচ্ছেন চলমান 'শুদ্ধি' অভিযানে গ্রেফতার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান। মাদরাসা ভবনের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ণের দায়িত্বে আছেন তার ছোট ভাই আলহাজ্ব এইচ এম হেলাল। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা যায়।

১২ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা  যায়, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুসংগল ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে মিজানের দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত আব্দুল আজিজ দাখিল মাদরাসার ভবন নিমার্ণ কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানান, ক্যাসিনো, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি ছাড়া হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মিজানের কোনো বৈধ আয় নেই। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মিজানের দাদা আব্দুল আজিজের নামে এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর (তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী) সুপারিশে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়। কাগজে ২৬১ জন শরণার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী নেই। এই মাদরাসায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৭ জন।

ছবি : মুরাদ মজুমদার

স্থানীয়রা জানান, জামাতপন্থি এনজিও হিলফুল ফুজুল থেকেও মাদরাসার জন্য আর্থিক সাহায্য পায় মাদরাসাটি। 

জানা যায়, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে শুক্রবার ভোরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থেকে তাকে র‌্যাব-২-এর একটি দল গ্রেফতার করে মিজানকে। পরে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিজানের মোহাম্মদপুরের বাসায় ও অফিসে অভিযান চালিয়ে ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক ও এক কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজ,অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, হাবিবুর রহমান মিজান পালিয়ে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। এজন্য বৃহস্পতিবার তিনি ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ টাকা তুলে লাপাত্তা হন। তবে র‌্যাবের বিশেষ একটি দল তার পিছু নেয়। জনপ্রতিনিধিত্বের বাইরে সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকলেও মিজান এত টাকা কোথায় পেলেন- সে বিষয়ে অনুসন্ধান করছে র‌্যাব। কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, দেশের বাইরেও বিভিন্ন রাষ্ট্রে তার অন্তত ১৫টি বাড়ি রয়েছে।

ছবি : মুরাদ মজুমদার

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজান মোহাম্মদপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এর আগে তিনি ওই থানায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় লোকজন তাকে 'পাগলা মিজান' নামেই চেনে। শুক্রবার তাকে গ্রেফতারের পর অভিযানের মধ্যেই মোহাম্মদপুর এলাকায় কয়েকশ লোক তার বিরুদ্ধে মিছিল করে স্লোগান দেন।

র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। র‌্যাব এসব নথি পর্যালোচনা করছে। এছাড়া মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট অভিযোগও আছে।

ছবি : মুরাদ মজুমদার

র‌্যাব সদস্যরা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডে মিজানের বাসা ও অফিসে অভিযান চালান। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে শ্রীমঙ্গল থেকে আটক করার সময়ে চারটি গুলি ভর্তি একটি পিস্তল ও নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ব্যাংক থেকে তোলা ৬৮ লাখ টাকা তিনি কোথায় রেখেছেন সে বিষয়ে তথ্য নেয়ার চেষ্টা চলছে।

মোহাম্মদপুরের ত্রাস: দুর্নীতি-সন্ত্রাস-ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন মিজান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। গ্রেফতার হওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আনন্দ মিছিল করার পাশাপাশি তার অপকর্মের কথাও বলছিলেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় জমি দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও বিহারী ক্যাম্পের মাদক, বিদ্যুৎ ও অবৈধ গ্যাসের লাইনের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবকে তিনি এসব ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদপুর এলাকায় একজন মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে তুচ্ছ ঘটনায় শত শত মানুষের সামনে জুতাপেটা করেন মিজান। তার অপকর্মের কথা কেউ মুখে বললেই নিজের বাহিনী দিয়ে নির্যাতন শুরু করতেন। মোহাম্মদপুর এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতা ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তার কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা তার ব্যাপারে নীরব থাকায় তিনি সাধারণ কাউকে পাত্তা দিতেন না। অপরাধ করেও তিনি এবং তার লোকজন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতেন।

চলমান অভিযানের মধ্যেও মিজানের অপকর্ম থামছিল না। গত ৫ অক্টোবর বিদ্যুৎ বিভাগ বিহারী ক্যাম্পে ৩২ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া হওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে তিনি বিহারীদের উসকে দেন। ওই ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এর আগে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউনুস হত্যা, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি জোড়া খুনের মামলায় তার নাম জড়িয়ে রয়েছে।

লোকমুখে যেভাবে তিনি 'পাগলা মিজান': কথিত আছে, কয়েক দশক আগে একবার পুলিশের তাড়া খেয়ে পুকুরে নেমেছিলেন মিজান। পরে গ্রেফতার এড়াতে পরনের পোশাক খুলে রেখে তিনি পুকুর থেকে উঠে আসেন, পাগলের মতো আচরণ করতে থাকেন। সেই থেকে লোকজন তাকে 'পাগলা মিজান' হিসেবে চেনেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এক সময়ে সিটি কর্পোরেশনের ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করতেন এই মিজান। এরপর গড়েছিলেন ছিনতাইকারী গ্রুপ। রাজনীতির ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে পুরো মোহাম্মদপুরের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণই চলে আসে তার কাছে। নেতা থেকে হয়ে যান জনপ্রতিনিধিও।

কারো কারো মতে, মিজান আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। এক সময়ে ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা হত্যা চেষ্টার আসামিও ছিলেন তিনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের - dainik shiksha অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের - dainik shiksha হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা - dainik shiksha মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো - dainik shiksha ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078508853912354