ভয়াবহ শিক্ষক সংকটে খুলনা মেডিকেল কলেজ। চাহিদার বিপরীতে অধিকাংশ পদই রয়েছে শূন্য। প্রভাষক মর্যাদায় চাহিদা অনুযায়ী থাকলেও অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদায় মাত্র ৩৩ শতাংশ শিক্ষক রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বদলির আদেশ পেয়েও কাজে যোগ দিতে গড়িমসি একাধিক সিনিয়র শিক্ষকের। আবার যোগদান করেও কলেজে না থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেনও অনেকে। ফলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায়।
সাধারণ ছাত্ররা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ভালো ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো মাসিক শিক্ষক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজে অধ্যাপকের ২৩টি পদ থাকলেও শিক্ষক আছে মাত্র ৬ জন, যার মধ্যে একজন আবার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সহযোগী অধ্যাপকের ৩৫টি পদ থাকলেও ২২টি পদেই শিক্ষক নেই। সহকারী অধ্যাপক ৪৪ জনের মধ্যে ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে এবং প্রভাষক ৩১ জনের মধ্যে তিনটি পদ এখনও শূন্য। রক্ত পরিসঞ্চালন বিষয়টি পড়ানো হয় ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ের ক্লাস পরিচালনা করেন শুধুমাত্র প্রভাষকরাই, কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই এখানে।
এভাবে এনাটমি, ফিজিওলজি, ফার্মাসি, প্যাথলজি, মাইক্রো বায়োলজি, ফার্মাকোলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন, সাইক্রিয়েটি, ডার্মাটোলোজি, সার্জারি, চক্ষু, ইএনটি, এনেস্থলোজি, রেডিওলোজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চলছে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক ছাড়াই। সহকারী অধ্যাপকও নেই সব বিভাগে চাহিদা অনুযায়ী। আবার এর বেশির ভাগে কয়েকজন সহকারী অধ্যাপক থাকলেও তাদের অনেকের বিরুদ্ধে কলেজের বেতন ভাতা নিয়ে খুলনার বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শংকর প্রসাদ বিশ্বাস বেশির ভাগ সময়ে সাতক্ষীরায় নিজ চেম্বার ও বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়মিত রোগী দেখেন ও ওটি (অস্ত্রোপচার) করেন। সাতক্ষীরা আনোয়ারা ক্লিনিকে নিয়মিত অপারেশন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অজানা কারণে বছরের পর বছর ক্লাস না দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সামসুন্নাহার লাকীকে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ২য় ও ৩য় বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন মাসের মধ্যে একবারও স্যারকে দেখতে পাওয়া যায় না এবং ক্লাসও নেন না।
সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মনোয়ার হোসাইনও কর্মস্থলে না থেকে বেশির ভাগ সময় সাতক্ষীরায় অবস্থান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এনেস্থেসিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ডা. মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর নাম থাকলেও তিনি সব সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। স্থায়ীভাবে ঢাকায় রয়েছেন মেডিসিন-এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর উল আলম। কলেজ প্রশাসনের একাধিক সূত্র এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন। তবে বদলির আদেশ পেয়ে কর্মস্থলে যোগদান না করে বরং আদেশ স্থগিত করতে তৎপর রয়েছেন একাধিক শিক্ষক। ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শফিউদ্দিন। বদলির আদেশের প্রায় ১৫ দিন দেরিতে যোগদান করেও প্রথমদিনই সবাইকে বলেছেন আমি ঢাকার লোক যে কোনোদিন চলে যাব। গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শংকর প্রসাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে কলেজে না থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য নয়। আমি সাতক্ষীরায় যাই, তবে নিয়মিত সেখানে থাকি না। তাছাড়া ক্লাস না থাকায় তেমন চাপ ও নেই।
কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আব্দুল আহাদ বলেন, সব সময়ই শিক্ষক সংকট ছিল। বর্তমানে বেশ কয়েকজন প্রভাষক যোগদান করায় কিছুটা সামাল দেয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের কারণ হিসেবে তিনি নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকেই দায়ী করেন। খুলনা মেডিকেল কলেজের জনবলে অন্তত ৫ জন সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক অন্তর্ভুক্তি থাকলেও খুলনার বাইরে অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তারা কিছুটা কম সময় দেয় এটা সত্য কথা, তবে অনেক সিনিয়র শিক্ষক রয়েছে, যাদেরকে সুযোগ না দিলে কলেজেরই ক্ষতি।