অবসরপ্রাপ্ত সব সরকারি চাকরিজীবী ঘরে বসেই পেনশনের টাকা পাবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় পেনশন অ্যান্ড ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অফিস এ বিষয়ে যাবতীয় কাজ প্রায় শেষ করেছে। আশা করা যাচ্ছে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হবে। প্রাথমিকভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সব কর্মকর্তাকে অনলাইনে পেনশনের আওতায় আনা হয়েছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৭ লাখ ৪১ হাজার সরকারি চাকরিজীবী মাসিক পেনশন পান। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের এক লাখ ২৬ হাজার জনকে অনলাইনের আওতায় আনা হয়। বাকিদেরও আনতে কাজ চলছে। এখন নিচের দিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, পেনশন সুবিধাভোগীরা তাদের সুবিধামতো যে কোনো ব্যাংকের যে কোনো শাখার হিসাব নম্বর দিতে পারেন। যাদের ব্যাংক হিসাব নেই বা থাকলেও বিকাশে পেতে চান, তাদের টাকা সেখানেই পাঠানো হবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে 'স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস' প্রকল্পের আওতায় মোট আটটি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর অন্যতম একটি কার্যক্রম হচ্ছে সরকারি খাতের পেনশন ব্যবস্থাপনা সংস্কার। যা গত বছর থেকে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, দ্রুত ও হয়রানিমুক্তভাবে পেনশনের টাকা সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেয়া।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাতের পেনশন ব্যবস্থার সংস্কারের ঘোষণা দেয়া হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, আগে পেনশন বাবদ বরাদ্দ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নানাভাবে রাখা হতো। মাসে মাসে পেনশনের টাকার জন্য এজি অফিস গিয়ে ধরনা দিতে হতো। এখন এ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থ বিভাগের অনুকূলে রাখা হয়েছে।
এ জন্য আলাদা একটি অফিস চালু করা হয়েছে। অনলাইনে পেনশন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে পেনশনের টাকা পেতে ভোগান্তি কমেছে সুবিধাভোগীদের।
প্রতি বছর বাজেটে বরাদ্দের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় পেনশন বাবদ। গত অর্থবছরে এ খাতে খরচ হয় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। পেনশন ব্যবস্থা সহজ করার জন্য কয়েক বছর ধরে কাজ করছে সরকার। এর আলোকে কল্যাণ তহবিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড, চাকরিজীবীরা অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার আগেই পেতে পারেন, সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পেনশনের জন্য যেসব দপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়, সেগুলো আর সংগ্রহ করতে হবে না। এ ছাড়া বিদ্যমান চাকরিজীবী স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী আজীবন পেনশন সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু চাকরিজীবী স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত এ সুবিধা পান। এ বৈষম্য দূর করার কথা ভাবছে সরকার।
পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নেয়ার পদ্ধতি শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। কিন্তু ২০১৭ সালের জুলাই থেকে বাধ্যতামূলক নিয়ম করা হয়, মোট পেনশনের ৫০ শতাংশ তুলে নেওয়া যাবে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ জমা রাখতে হবে।
পেনশন সুবিধা আরও বাড়িয়েছে সরকার। অবসর নেয়ার পর যেসব সরকারি চাকরিজীবী পুরো টাকা তুলেছিলেন, তারাও এখন মাসিক পেনশন পান। সঙ্গে বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট। অবসরের তারিখ থেকে ১৫ বছর পার হওয়া চাকরিজীবীদের এর আওতায় আনা হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অন্য স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরিকেও পেনশনযোগ্য করা হয়েছে।