ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না গাজীপুর শিক্ষা অফিসে - দৈনিকশিক্ষা

ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না গাজীপুর শিক্ষা অফিসে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

গাজীপুর মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সয়লাব। চেয়ারে বসেই দিনের পর দিন এমপিও, টাইমস্কেলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ অনেকের। 

এর কিছুক্ষণ পর নিয়োগ চূড়ান্ত করার বিষয়ে কথা বলতে এই শিক্ষক ছদ্মরূপ নেওয়া প্রতিবেদক যান শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানার কক্ষে। তার সামনে বসার পরপরই কিছুটা ধমকের সুরে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র আনছেন? কাগজ দেন।’ কাগজপত্র নিয়ে প্রধান শিক্ষক আসছেন জানিয়ে খরচ কত লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খরচ বলতে যা খুশি হয়ে দেবেন, সেটাই। আগে কাগজপত্র আসুক, তারপর খরচ নিয়ে কথা বলা যাবে।’

এর আগে, এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষা অফিসে প্রবেশের আগেই পাওয়া যায় শ্রীপুরের কেওয়া তমিরউদ্দিন আলিম মাদরাসার এক শিক্ষককে। তিনি বলেন, ‘আমি তো পুরাতন ইনডেক্সধারী। ম্যাডাম বললেন, তোমার তো শুধু প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হবে। বেশি লাগবে না। পরে আমি খামে ভরে ২ হাজার দিয়ে আসছি । এখানে তো টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না, এটা সবাই জানে।’

ভুক্তভোগী আরও কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে এই প্রতিবেদককে জানান, প্রতিষ্ঠানের নাম কর্তন, এমপিও, টাইমস্কেল, নিয়োগ, শ্রেণি অনুমোদন এবং শিক্ষকদের বিভিন্ন তদন্ত রিপোর্টে ঘাপলা করে তাদের চাপে ফেলে ঘুষ নেন রেবেকা সুলতানা। এই ঘুষের প্রস্তাব দিতে ও পরিমাণ নির্ধারণে কাজে তিনি লাগান পিয়ন নুরু ও অফিস সহকারী জালালকে। তারাও ঘুষের টাকার একটি অংশ পান। তবে ঘুষের টাকা হাতে হাতে নেন শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, কোনো প্রয়োজনে শিক্ষকরা তার দপ্তরে গেলে নুরুর মাধ্যমে অথবা রেবেকা সুলতানা নিজেই তাকে ফোন করে ডেকে নেন। এরপর বিভিন্ন ইঙ্গিতে তিনি নিজেই ঘুষ দাবি করেন। কখনও কখনও নুরুর মাধ্যমে ঘুষের টাকা চান। টাকা না দিলে ফাইল আটকে দেন। বিভিন্ন কাজের জন্য ৫০০ থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত ঘুষের রেট। এর বাইরে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় হলে দরকষাকষি করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন রেবেকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেবেকা সুলতানা গাজীপুরের একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের কারণে সেসব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলও করেছেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হলেও ‘উচ্চ পর্যায়ে লবিং করে’ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর গাজীপুরে ফিরে আসেন। সেই থেকে তিনি গাজীপুরেই আছেন। অভিযোগ আছে, কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি ঘুষ ও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন।

গাজীপুর মহানগরীর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার স্কুলটি অষ্ঠম শ্রেণি পর্যন্ত কার্যক্রম আছে। নবম শ্রেণির অনুমোদনের জন্য তার কাছে ঘুরে ঘুরে কোনো লাভ হয়নি। অনুমোদনের জন্য স্কুল ভিজিটে এসে আমার স্কুলের সব কাগজপত্র ঠিকঠাক পেয়েও তিনি উল্টো রিপোর্ট দিয়েছেন ডিজি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে) অফিসে। আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আমার তো এই স্কুলের প্রতি মায়া আছে, স্কুলের উন্নতি চাই। কিন্তু তিনি আমার অনেক বড় ক্ষতি করে দিয়েছেন। আকার ইঙ্গিতে ঘুষ চাইতেন। বিভিন্ন সময় তাকে খুশি করে (ঘুষ) দিয়েছি। তারপরও তিনি আমার স্কুলের নামে উল্টো রিপোর্ট দিয়েছেন।’

কালিয়াকৈরের আড়াইগঞ্জ আজিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়। এবং মামলা থাকার পরও আড়াই লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে রেবেকা সুলতানা ওই শিক্ষকের এমপিওভুক্তি করে দেন। আমি যখন তার অফিসে যাই তখন দেখি, শিক্ষকরা যে কাজেই আসুক না কেন, তিনি খাম ছাড়া কোনো কাজ করেন না। কোনো কোনো শিক্ষকের সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেন। তার এসব কার্যকলাপ দেখার কেউ নেই।’

জেলা শিক্ষা অফিসের এক প্রবীণ কর্মচারী রেবেকা সুলতানার ‘ঘুষ বাণিজ্য’ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘৩৬ বছরের চাকরি জীবনে আমি এমন ঘুষখোর কর্মকর্তা দেখি নাই। কালিয়াকৈরের থানা শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ও রেবেকা সুলতানা দুজনই যোগসাজশ করে ঘুষের হাট বসিয়েছেন। থানা শিক্ষা অফিস থেকে ঘুষ খেয়ে কোনো শিক্ষকের কাগজ জেলা শিক্ষা অফিসে রেবেকা সুলতানার কাছে পাঠালে তিনি আবারও সেই শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষ খান। এভাবেই চলছে।’

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050861835479736