প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে আগামী ছয় ফেব্রুয়ারির আগে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। যদিও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানয়িছেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর চীন থেকে বিভিন্ন দেশকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে না নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে জানান, চীনে অবস্থানকারী বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের যারা দেশে ফিরতে চান তাদের নিয়ে আসতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু চীন সরকার কোন দেশের নাগরিককেই এখনই ফেরত যেতে দিচ্ছে না। যেহেতু ভাইরাসের সংক্রমনের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ১৪ দিন সময় লাগে, তাই সেই সময়টি পার হতে দিতে হবে। কবে সেই ১৪ দিন অতিক্রান্ত হবে জানতে চাইলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আগামী ৬ ফ্রেব্রুয়ারি ১৪ দিনের সময়সীমা শেষ হবে। অবশ্য মধ্য ফ্রেব্রুয়ারিতে চীনে তাপমাত্রা বাড়লে করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার হার কমে আসবে বলেও জানানো হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বেশি তাপমাত্রায় ভাইরাসটি কার্যকারিতা হারাবে।
এদিকে ডব্লিউএইচও নির্দেশনা দিয়েছে, চীন থেকে বিভিন্ন দেশ যেন তাদের নাগরিকদের সরিয়ে না নেয়। করোনা ভাইরাস যেন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্যই সংস্তাটি এ ধরনের বার্তা দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ডব্লিউএইচও বলছে, আমরা লক্ষ করেছি, কিছু দেশ নিজেদের নাগরিকদের চীন থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ডব্লিউএইচও সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের শান্ত থাকা উচিত এবং অত্যধিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর দরকার নেই। মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য চীন সরকারের ক্ষমতায় বিশ্বাস রয়েছে ডব্লিউএইচও'র।
এদিকে চীনে আটকাপড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, যারা ফিরতে চান তাদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়ে গেছে। আর কি ধরনের বিমান আমরা পাঠাব তা জানতে চেয়েছে চীন। আমরা দুই এক দিনের মধ্যেই সঠিক ধারণ ক্ষমতার বিমানটি নির্ধারণ করতে পারবো ফিরে আসতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা জানার মাধ্যমে। মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার ফেসবুক পেজে এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘সার্স ভাইরাসের ভেকসিন আবিস্কার করতে 'জিন সিকুয়েন্স' থেকে মানব দেহে পরীক্ষা করতে সময় লেগেছিলো ২০ মাস। করোনাভাইরাসের 'জিন সিকুয়েন্স' ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা (রয়টার্স জানিয়েছে আজকে)। ভ্যাকসিন তৈরি করে তা মানব দেহে পরীক্ষা করতে সর্বোচ্চ সর্বমোট সময় লাগবে ৩ মাস যার মধ্যে ১ মাস প্রায় পার হয়ে গেছে। সার্স এর পরে চীন এই সম্ভাব্য ঝুঁকির জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে যার প্রভাব আমরা দেখছি সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থায়।
এই কথাগুলো তাদের জন্য যারা খুব শংকার মধ্যে আছেন চীনে। ঘরের মধ্যেই এক নাগাড়ে থাকতে বলাটাই একধরনের 'কোয়ারেন্টাইন' ব্যবস্থা। ১৪ দিন সর্বোচ্চ, যার মধ্যে কম বেশি ৭ দিন পার হয়ে গেছে।
কি ধরনের বিমান আমরা পাঠাব তা জানতে চেয়েছে চীন। যারা ফিরতে চান তাদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়ে গেছে। আমরা দুই এক দিনের মধ্যেই সঠিক ধারণ ক্ষমতার বিমানটি নির্ধারণ করতে পারবো ফিরে আসতে চাওয়া মানুষের সংখ্যার মাধ্যমে।
আমি অনুরোধ করবো যে কয়েকটা দিন ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে সেই সময় পর্যন্ত চীন সরকারের প্রতিটি নির্দেশনা কোন ব্যতিক্রম ছাড়া মেনে চলার জন্য। এতে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু নিজের জীবনের স্বার্থে এবং ভাইরাসটি যেন তাদের কারও মাধ্যমে না ছড়ায় তা নিশ্চিত করতে চীনের স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনাগুলো মেনে চলতেই হবে।
আমি আরও অনুরোধ করবো বাংলাদেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের যেন চীনে থাকা তাদের আত্মীয়দের তারা এই বার্তাটি পৌঁছে দেন এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছেন। আমরা ঢাকা থেকে দূতাবাসের কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় করছি এবং তদারকি করছি। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহতা'আলা সহায় হউন।’