রংপুর অঞ্চলের প্রাচীনতম ভবনগুলোর একটি রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবন। কালের বিবর্তনে বহু স্মৃতিবিজড়িত রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি এখন সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। তার পরও এই পুরোনো ভবনেই অনুষ্ঠিত হয় নানা আয়োজন। বিভিন্ন সংগঠন প্রায়ই সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান আয়োজন করছে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি রংপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের পেছনেই নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক শিল্পকলা একাডেমি ভবন। এর পাশে রংপুর টাউন হল। রয়েছে বিভাগীয় সরকারি গ্রন্থাগার। তবে শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবনের আড়ালে পরে গেছে পাবলিক লাইব্রেরি ভবন।
জানা গেছে, ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ এর কলকাতার বাইরে প্রথম শাখা হিসেবে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ’। ভারতীয় উপমহাদেশের সাহিত্য চর্চায় ‘রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ’ গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। বিভিন্ন সময়ে জমিদার ও রাজাদের আগ্রহে ‘রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ’ নিজস্ব কার্যালয় ‘মহিমা রঞ্জন সারস্বত ভবন’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরবর্তীতে ১৯১৩-১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ইংরেজ আইসিএস অফিসার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রস্তাবে মহিমা রঞ্জন স্মৃতি ভবনের নাম পরিবর্তন করে এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল করা হয়। পরে সাহিত্য পরিষদের কার্যালয়ের পরিবর্তে রঙ্গপুর পাবলিক লাইব্রেরির কার্যালয় হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে সাহিত্য পরিষদ এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলের একটি অংশে স্থানান্তরিত হয়।
জরাজীর্ণ এ ভবনের কাছে গেলে চোখে পড়বে পুরোনো স্থাপনা সংরক্ষণের উদাসীনতার চিত্র। রংপুরের সচেতন মহলের দাবি, এই পুরাতন স্থাপনাটি না ভেঙে সংস্কার করা হোক। এতে নতুন প্রজন্ম ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে রংপুর অঞ্চলের গৌরবময় ইতিহাসও জানতে পারবে।
এ ব্যাপারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ এর কার্যকরী সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘হুমকির মুখে রয়েছে এই প্রাচীন এ স্থাপনাটি। কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এ ধরনের স্থাপনাগুলো যুগের পর যুগ ধরে সংরক্ষণ করা হয়। আর আমাদের দেশে তা না করে উলটো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। যার প্রমাণ এই পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি। ১৫০ বছরের পুরোনো এই ভবনের সংস্কার ও সংরক্ষণ জরুরি।
অন্যদিকে শিক্ষাবিদ ও সংগঠক অধ্যাপক মলয় কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, দিন যতই যাচ্ছে ততই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। তারপরও সংস্কারের উদ্যোগ নেই। স্থাপনাটি সংরক্ষণে কোনো পরিকল্পনা না থাকা খুবই দুঃখজনক। আমাদের অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুরোনো এ স্থাপনা না ভেঙে সংস্কার করা দরকার। এতে আগামী প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে।