জাতীয়করণের লক্ষ্যে স্কুল-কলেজের নতুন তালিকা তৈরি হচ্ছে। তালিকা তৈরির নির্দেশনা পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করেছেন। বুধবার বিকেলে তাঁকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র দৈনিকশিক্ষাকে এ খবর নিশ্চিত করেছে।
সরকারি বিদ্যালয় ও কলেজবিহীন উপজেলা সদরে একটি করে প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গতবছর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন একটি কমিটি স্কুল ও কলেজের দুটি আলাদা তালিকা, ব্যয়ের সম্ভাব্য হিসাবসহ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। জাতীয়করণের একটি নীতিমালাও তৈরি হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির তৈরি করা স্কুল-কলেজের তালিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক সংসদ সদস্য। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেয়া বিভিন্ন সময়ের নির্দেশনা পাস কাটানোরও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। স্কুল কলেজ জাতীয়করণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জাতীয়করণের নতুন তালিকা ও কাজের গতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাংসদেরা।৩১৫ মডেল প্রকল্পভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রধান্য দেওয়ার নামে কয়েকটি প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, এমন অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে কলেজের তালিকা তৈরিতেও নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
জাতীয়করণের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত কয়েকটি বেসরকারি কলেজ অধ্যক্ষদের একটি সমিতি রয়েছে। ওই সমিতিও কলেজের তালিকা তৈরি ও ইতিপূর্ব জাতীয়করণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নির্দেশিত তালিকার বাইরের প্রতিষ্ঠান নিয়েও কাজ করছে মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি চক্র, এমন অভিযোগ করেছেন। তাঁরাও লিখিত আবেদনে প্রধানমন্ত্র্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক দৈনিকশিক্ষাকে জানান, একজন অতিরিক্ত সচিবের দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের স্কুল ও কলেজ শাখার কয়েকজন কর্মকর্তাকে গত বছরের বিভিন্ন সময়ে তাদের চাহিদামাফিক টাকা দিয়েছেন যাতে তালিকা নাম থাকে বা নাম উঠানো যায়।
‘অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরের প্রায় সবাই এখন আমাদের দেখলেই খেকিয়ে ওঠেন, বলেন বাড়ীতে চলে যান, জাতীয়করণের আদেশ হলেই জানতে পারবেন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসা্েটে। অথচ এদের বাসায় গিয়ে ১০০ ও ৫০০ টাকার পুরনো নোটের বান্ডিল দিয়ে এসেছি, তখন খুব ভালো ব্যবহার করেছেন,’ পঞ্চগড়ের ক্ষুব্ধ একজন অধ্যক্ষ দৈনিকশিক্ষাকে বলেন।
তিনি বলেন, কলেজের প্রায় সব শিক্ষকের কাছ থেকে কয়েকলাখ টাকা তুলে দেয়া হয় এদের হাতে, এখন বুঝতে পেরেছি বড় ভুল হয়ে গেছে।
জাতীয়করণ নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তার দপ্তর বদল হয়েছে সম্প্রতি। শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন কড়া হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘জাতীয়করণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে মন্ত্রণালয়ের কারো বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তি দেবেন।’ ঘুষখোর মন্ত্রণালয়ে ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন তিনি।
সচিব সাফ বলে দিয়েছেন, কোনো কাজে কোনো ঘুষ লাগে না মন্ত্রণালয়ে।