জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান (পর্ব-৩) - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান (পর্ব-৩)

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের শিক্ষক-কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ বাতিল করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন চায় জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষক সমিতি।

নতুন বিধিমালা প্রণয়নে নয়টি প্রস্তাবসহ শিক্ষক-কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ কেন বিতর্কিত তার ব্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে সমিতি।

চিঠিটি দৈনিক শিক্ষার পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল। আজ পড়ুন তৃতীয় পর্ব-

 

ধারাঃ ২ (ছ) (শিক্ষাগত যোগ্যতা) কেন বিতর্কিত?

(ক) আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ দ্বারা জাতীয়করনকৃত কলেজ শিক্ষকদের ওপর বিসিএস (জেনারেল শিক্ষা) ক্যাডারে প্রবেশের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রথম শ্রেনীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা দ্বিতীয় শ্রেনির স্নাতকোত্তর ডিগ্রী আরোপ করা হয়েছে যা আত্মীকরন বিধিমালা-১৯৮১, ১৯৯৮ এর ‘‘প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার’’ সাথে সাংর্ঘষিক।

(খ) আত্মীকরন বিধিমালা-১৯৮১, ১৯৯৮-এর বিধিতে আত্মীকরনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল শুধুমাত্র ২য় শ্রেনির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এমনকি তৃতীয় শ্রেনির স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদেরকেও ০৩ বছরের মধ্যে ২য় শ্রেনির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের শর্তে পূর্বে এড-হক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল।

(গ) বেসরকারি কলেজ শিক্ষক নিয়োগ হয় শিক্ষামন্ত্রনালয় ও এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রনীত প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে। এ যোগ্যতা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়। এখনো ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে ২য় শ্রেনির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু আছে। তাই বিসিএস (জেনারেল শিক্ষা) ক্যাডারের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে জাতীয়করনকৃত কলেজ শিক্ষকদের আত্মীকরন করে সকলকে সরকারিকরনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। তাই বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের জন্য নিয়োগকালীন শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করা অধিক সমীচীন ও যুক্তিযুক্ত।

(ঘ) সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প হতে রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে নিয়োগকালীন যোগ্যতাকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক/কর্মচারীর নিয়োগকালীন যোগ্যতাকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ধরা হবে না কেন?

(ঙ)আত্মীকরন বিধিমালা মূলতঃ একটি প্রমার্জিত বিধিমালা। এ বিধিমালায় PSC কর্তৃক প্রনীত ক্যাডারে প্রবেশের ৩০ বছর বয়স সীমা, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরীক্ষায় অংশগ্রহনের শর্ত কোনটিই আরোপ করা সম্ভব নয়। অথচ আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ এ কৌশলে বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে প্রবেশের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রতিস্থাপন করে হাজার হাজার শিক্ষকের আত্মীকরন বন্ধ করাসহ সরকারি কলেজের শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ অস্থির করে তোলা হচ্ছে।

(চ) বিসিএস কোন ডিগ্রি নয়। এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা মাত্র। PSC এই পরীক্ষা গ্রহন করে থাকে। বেসরকারী কলেজে চাকুরী পেতে হলেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষা গ্রহন করেন গভর্নিং বডি কর্তৃক গঠিত নিয়োগ বোর্ড বা নিয়োগ কমিটি। এ বোর্ডে ০১ জন ডিজির প্রতিনিধি (সরকারি কলেজের শিক্ষক) এবং ০১ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি থাকা বাধ্যতামূলক। বিশেষকরে মূল্যায়ন পত্রে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর না থাকলে এমপিওভুক্তি সম্ভব নয়। বর্তমানে নিয়োগবোর্ড কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষার সাথে ২০০৫ সাল থেকে NTRCA কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও পাসের সনদ যোগ হয়েছে অর্থাৎ বেসরকারি কলেজে শিক্ষক হতে হলে দুটো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিতে হয়- একটি নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত এবং আরেকটি NTRCA কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষা যা বিসিএস পরীক্ষার আদলে অনুষ্ঠিত হয়।

(ছ) বিসিএস শিক্ষা সমিতির ‘‘নো বিসিএস, নো ক্যাডার’’ শ্লোগান দাবী মেনে নিলে আত্মীকরন বিধিমালা-১৯৮১, ১৯৯৮ দ্বারা আত্মীকৃত শিক্ষকদের অবস্থান কী হবে বোধগম্য নয়। একই উদ্দেশ্যে একদল শিক্ষক সুযোগ পেলেন এবং আরেকদল বঞ্চিত হবেন এটা আইনগত জটিলতা বাড়াবে।

(জ) বর্তমানে NTRCA বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের নিয়োগের সুপারিশ ও শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রদান করে থাকেন। এটি একটি সম্পূর্ন সরকারি সংস্থা। NTRCA এর বিধিতে এখনো শুধুমাত্র ২য় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রী এবং শিক্ষা জীবনে ০১টি তৃতীয় শ্রেণি/বিভাগ থাকলে বেসরকারি কলেজের প্রভাষক হওয়া যায়।

(ঝ) ক্যাডারের প্রভাষক নিয়োগ বিধিমালা এবং আত্মীকরণ বিধিমালা এক জিনিস নয়। এদের উদ্দেশ্য ও প্রয়োগ ক্ষেত্র সম্পূর্ন ভিন্ন। ক্যাডারের প্রভাষক নিয়োগ বিধিমালা প্রয়োগ হয় সরকারি কলেজের বিদ্যমান শূণ্য পদের বিপরীতে সরাসরি নতুন শিক্ষক বা Entry Level এর শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে, আত্মীকরণ বিধিমালা প্রয়োগ হয় কোন সদ্য জাতীয়করণকৃত কলেজের পূর্ব থেকে চাকুরীরত দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক/কর্মচারীদের আত্মীয়করণের উদ্দেশ্যে।

ধারা ৩ (১, ২) এডহক নিয়োগঃ

(ক) এ ধারা অনুযায়ী ‘‘প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা’’ তথা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রথম শ্রেনির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ২য় শ্রেনির অনার্স ডিগ্রিসহ ২য় শ্রেনির স্নাতকোত্তর ডিগ্রির অভাবে সদ্য জাতীয়করনকৃত কলেজের অনেকেই এডহক নিয়োগ পাবেন না। আবার বিভিন্ন পদ মর্যাদার শিক্ষককে (অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারি অধ্যাপক, সিনিয়র প্রভাষককে) ৩/৪ ধাপ নামিয়ে সকলকে একইসঙ্গে প্রভাষক পদে এবং প্রভাষক পদের স্কেলে আত্মীকরন হতে হবে। অথচ একই বিধিমালার ২ (জ) উপধারায় শিক্ষকের সংজ্ঞায় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক বা তুদুর্ধ পদধারী শিক্ষকের কথা বলা আছে। অর্থাৎ আত্মীকরণ বিধিমালা-২০০০ এর ৩(২) উপধারাটি একই বিধিমালার ২(জ) উপধারার সাথে পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। আবার এই ধারা অনুযায়ী জাতীকরনকৃত কোন কলেজের অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ যদি সদ্য যোগদানকারী হন তাহলে তিনি ঐ কলেজের সর্বকনিষ্ঠ প্রভাষকের নিচে চলে যাবেন।[inn]

(খ) উল্লেখ্য যে, আত্মীকরন বিধিমালা-১৯৮১ তে সহকারি অধ্যাপক পর্যন্ত এডহক নিয়োগের ব্যবস্থা ছিল। এই বিধি আবার পরবর্তীতে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে চ্যালেঞ্জ হলে (রিট নং ৪৮১/৮৯, সিভিল আপিল নং ৫২/৯১) পুনঃপ্রনীত আত্মীকরন বিধিমালা-১৯৯৮ এর ৩(১) এ স্বস্ব পদে বা সমমানের অন্য কোন পদে আত্মীকরনের মাধ্যমে এডহক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ এ উপরোক্ত কোনটিই রাখা হয়নি। আসলে আত্তীকরন বিধিমালা-২০০০ মূলতঃ ক্যাডার প্রবেশের নিয়োগবিধির কার্বন কপি। (সংযুক্ত পৃষ্ঠা নং ৩৬-৪৬)

(গ) জাতীকরনের অব্যবহিতপূর্বে সদ্য যোগদানকারী একজন প্রভাষক তার স্বপদে আত্মীকরণ হবেন কিন্তু দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ/সহকারী অধ্যাপক/সিনিয়র প্রভাষক কেন তার স্বপদে/স্বস্কেলে আত্মীকরণ হবেন না এটি বোধগম্য নয়।

আরও পড়ুন

 

জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান

জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান (পর্ব-২)

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032379627227783