জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানটিই বড় দাগে প্রশ্নের সম্মুখীন - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানটিই বড় দাগে প্রশ্নের সম্মুখীন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার্থী বানিয়ে ফেলা, দ্বৈত পরীক্ষক পদ্ধতি বাদ দিয়ে আত্মঘাতীমূলক একক পরীক্ষক পদ্ধতি চালু করা,  খাতা না দেখে ফল প্রকাশ করা, সাত কলেজ ঢাবিকে হস্তান্তরে গোলমাল করা, পরীক্ষা না দেয়া শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেয়া, দরকার নেই তবু শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে লিখেছেন বিমল সরকার। লেখক বিমল একজন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। সর্বশেষ তিনি একটি বড় সরকারি কলেজে শিক্ষক পদে ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি ঘনিষ্ঠ ও নিবিড়ভাবে দেখেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড।  আজ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত তাঁর লেখাটি দৈনিক শিক্ষার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো: 

“এ এক ব্যতিক্রমী সরকার। ব্যতিক্রমী প্রধানমন্ত্রী। নিঃসন্দেহে অনন্যসাধারণ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একদিক থেকে আমি পরম সৌভাগ্যবান মনে করি এ কারণে যে, স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এ পর্যন্ত তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন পৌনঃপুনিকভাবে সর্বোচ্চ মোট ষোল বছর দেশ শাসনের সুযোগ পান যা বর্তমান মেয়াদান্তে ২০ বছর পূর্ণ হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমাদের দেশে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি একনাগারে ১১ বছর ধরে ক্ষমতাসীন। সবকিছু ঠিক থাকলে সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ শাসন করবে। এ পর্যন্ত আমাদের দেশে আর কোনো গণতান্ত্রিক সরকারই টানা দুই মেয়াদ (১০ বছর) তার কার্যকাল সম্পন্ন করতে পারেনি।

আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত (১৯৭১-২০২০) ৪৮ বছরের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বটি পালন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার বহনকারী ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছে একাধিক প্রধানমন্ত্রীর নামও। একইভাবে রয়েছে স্বনামখ্যাত ও অত্যন্ত মেধাবী বলে পরিচিত বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদের নাম। কিন্তু উল্লিখিত ৩৪ জনের মধ্যে একমাত্র নুরুল ইসলাম নাহিদই পরম সৌভাগ্যবান, যিনি সবচেয়ে বেশিদিন, টানা ১০ বছর (২০০৯-২০১৮) শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একটানা পুরো দু’মেয়াদ (১০ বছর)। আমাদের দেশে এ-ও এক বিরল ঘটনা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯২ সালে। সূচনাকাল থেকে এ পর্যন্ত (১৯৯২-২০২০) ২৮ বছরে মোট ১০ ব্যক্তি ভিসির দায়িত্ব পালন করেছেন বা করে চলেছেন। এ ১০ জনের মধ্যে বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ একমাত্র ব্যক্তি যিনি দু’মেয়াদে অর্থাৎ প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়বার (২০১৩-২০১৭ ও ২০১৭-চলমান) দায়িত্ব পালন করছেন। সবচেয়ে বেশিদিন, টানা সাত বছর ধরে (বিধি অনুযায়ী ভিসি চার বছরের জন্য নিযুক্ত হয়ে থাকেন) অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।

লক্ষ করার বিষয় হল বিস্তৃতি, কর্মপরিধি ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ১০ জন ভিসির মধ্যে মাত্র চারজন অর্থাৎ সংখ্যার দিক দিয়ে অর্ধেকেরও কম, যার যার নির্ধারিত মেয়াদ শেষ করে যেতে পেরেছেন। বাকি ছয়জনই কেউ সাত মাস, কেউ আট মাস কিংবা ১১ মাস বা সর্বোচ্চ ২৪ মাস (২ বছর) পর্যন্ত চেয়ারটিতে সমাসীন ছিলেন। এদিক থেকে তার অন্য যে কোনো পূর্বসূরির চেয়ে ড. হারুন-অর-রশিদ নিঃসন্দেহে পরম সৌভাগ্যবান। চার বছরের জন্য নির্ধারিত প্রথম মেয়াদ শেষ করে ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয় তার।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌভাগ্যবানদের মধ্যে আরেকজন হলেন বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নোমান উর রশীদ। চার বছরের মেয়াদ শেষে নোমান উর রশীদেরও দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয় ২০১৭ সালে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষদের মধ্যে তিনি নবম। কেবল সৌভাগ্যবান নয়, তাকেও একজন পরম সৌভাগ্যবান বলা যায় এ কারণে যে, নোমান উর রশীদের আগে দীর্ঘ ২৮ বছরের মধ্যে আর কেউ গুরুত্বপূর্ণ কোষাধ্যক্ষ পদটিতে দ্বিতীয়বার নিয়োগ পাননি। অধ্যাপক নোমান উর রশীদের চার বছরের প্রথম মেয়াদ (২০১৩-২০১৭) শেষে দ্বিতীয় মেয়াদের তিন বছর পূর্তি হবে আগামী এপ্রিল (২০২০) মাসে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও একজন রয়েছেন- নাম বদরুজ্জামান। তিনি অবশ্য স্থায়ীভাবে পদাসীন নন, তবুও স্থায়ীদের চেয়ে কোনো অংশে কমও নন- বরঞ্চ একদিক দিয়ে অন্য সবার চেয়ে বেশ এগিয়ে। তিনি ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। বছরের পর বছর ধরে তিনি ‘ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক’। তার নাকি কোনো ‘মেয়াদ-টেয়াদ’ নেই। আছেন তো আছেনই। কখন থেকে তার ওপর বর্তেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বভার এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা ছিল না। তবে বছর-দুই আগে (২০১৮) একবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গেলে বাইরে ফাঁকা জায়গায় সাধারণ দুইজন কর্মচারীর মধ্যে কথোপকথনের সময় কিছুটা আঁচ করতে পারি। বেশ ক্ষোভের সঙ্গে অধীনস্থ তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির দুইজন কর্মচারীর মধ্যকার কথোপকথনের ভাবটি যেন আমার কানে আজও ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয়। জেনে খুবই বিস্মিত হয়েছি এবং আমি আশা করি আরও যারা জানতে পারবেন তারাও ঠিক আমার মতোই বিস্মিত হবেন যে, ২০০৮ সাল থেকে ওই কর্মকর্তা বদরুজ্জামান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভারপ্রাপ্ত’ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। সে হিসেবে পুরো এক দশক (১০ বছর) বা এক যুগ ধরে একই পদে তিনি আছেন দায়িত্বে (যে কারও মনে কৌতূহল এবং বিস্ময়ের উদ্রেক হতেই পারে যে, দীর্ঘদিনে কেন একজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেয়া হয় না অথবা নতুন কাউকে খুঁজে একেবারেই না পাওয়া গেলে যিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তাকেই কেন স্থায়ী করে নেয়া হয় না)। কৌতূহল আর ধরে রাখতে পারিনি। নিজের চোখে দেখার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতরে, তিনতলায়। এ সময়টিতে তিনি ভেতরে না থাকায় কক্ষটি বন্ধ রয়েছে। বাইরে দেয়ালে খুব মজবুত করে সাঁটানো সোনালি রঙে লেখা নাম ও পদবি দেখলে যে কেউ-ই আন্দাজ করতে পারবেন যে, এ কোনো সাময়িক নয়, একেবারে শক্ত ও পাকাপাকি বন্দোবস্ত।

দেশে উচ্চশিক্ষার সিংহভাগ দায়িত্বপালনকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী সরকার ক্ষমতাসীন রয়েছে। টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করে অভিজ্ঞতা অর্জনকারী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বর্তমানে মন্ত্রিত্বে না থাকলেও তার সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে রয়েছেন ডা. দীপু মনি। ভিসি, কোষাধ্যক্ষ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর প্রতিটিতেই অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই অপেক্ষাকৃত বেশি অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন। এমনসব অনুকূল পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা ছিল; কিন্তু বাস্তবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানটিই আজ বেশ বড় দাগে প্রশ্নের সম্মুখীন। দেশব্যাপী কলেজ বাড়ছে, বাড়ছে অনার্স ও মাস্টার্স পড়ানোর ব্যাপ্তি-পরিধি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট অর্জনের বিষয়টি এখন বেশ আলোচিত। কিন্তু নেই, নেই কেবল লেখাপড়ার কাঙ্ক্ষিত মান। তাহলে দীর্ঘকালীন সরকার ও একেকজন দক্ষ-অভিজ্ঞ কর্মকর্তার টোটাল কর্মকাণ্ডের সার্থকতা কোথায়? কেবল আয়োজন-বন্দোবস্ত নয়, আমরা চাই ফল- ভালো ফল।”

বিমল সরকার : অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0081140995025635