যশোরের কেশবপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জাল নিবন্ধন সনদের দায়ে চাকরিচ্যুত সেই দুই শিক্ষককে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে স্বপদে পুনর্বহাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতির দাবি হাইকোর্টের নির্দেশে তাদের প্রতিষ্ঠানে যোগদান করানো হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে সরফাবাদ গ্রামের আকবর আলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর ওয়াপদা জামে মসজিদের ঈমাম মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বেলালী ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই (ইনডেক্স নং-১০৭১৬৫২৪) ইসলাম ধর্ম শিক্ষক হিসেবে এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের মেয়ে ফাহমিদা নাসরিন (ইনডেক্স নং-৩১৪১০৩৯৫) ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) হিসেবে উপজেলার বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ওই নিবন্ধনেই তাদের এমপিওভুক্ত হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি রুহুল কুদ্দুস অতিগোপনে ভুয়া নিবন্ধনে ওই দু’শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ। এ সময় তাদের দু’জনের নিবন্ধন সনদকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বজলুর রহমান ও আকবর আলী পৃথক দুটি অভিযোগপত্র উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ মোতাবেক তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার ওই সময় অভিযুক্ত শিক্ষকদ্বয়ের নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যানের কাছে পত্র প্রেরণ করেন। যাচাই শেষে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সহকারী পরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) এনটিআরসিএ মো. লোকমান হোসেন বেশিনিকি/শি.শি/সনদ/৪৪৮নং স্মারকে অভিযুক্ত দু’শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ সঠিক নয় মর্মে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পত্র প্রেরণ করেন। পত্র প্রাপ্তির পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ উত্তোলিত সমুদয় অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ দিয়ে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপক, রূপালী ব্যাংক, পাঁজিয়া শাখাকে পত্র প্রেরণ করেন। দীর্ঘদিনেও বিদ্যালয়ের সভাপতি অভিযুক্ত ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গতবছরের ২৪ জুন তৎকালীন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন ভুয়া নিবন্ধনে চাকরিরত ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক পত্রে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয় এবং এ যাবত উত্তোলিত সরকারি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরই জের ধরে অভিযুক্ত শিক্ষক ফাহমিদা নাসরিন তার বেতন ভাতা বন্ধ ও ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে পিটিশন মামলা নং- ৪৭৬৭/১৫ এবং অপর শিক্ষক হাবিবুল্লাহ বিলালী পিটিশন মামলা নং- ৪৭৪৩/১৫ দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চের প্রজ্ঞাপণ অনুসারে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওই দু’শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস না করে ভুয়া নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। পরে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান খানের সহযোগিতায় সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হন।
নিয়োগ পরীক্ষার সময় নিয়োগকৃত শিক্ষকদ্বয় যে নিবন্ধন সনদ দাখিল করেন তা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রদানকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সঠিক নয় মর্মে ওই সময় পত্রের মাধ্যমে আমাকে অবহিত করেছিল। কিন্তু ওই ২ শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে রিট পিটিশন মামলায় যে নিবন্ধন সনদ দাখিল করেছেন তা ২০১৪ সনের পরীক্ষার সনদ। তারা যে নিবন্ধন সনদ দেখিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বা এমপিওভুক্ত হন তা তারা মহামান্য উচ্চ আদালতে দাখিল করেননি। এ ছাড়াও বাদিরা ১৮ জুন যে সময় চাঁদাদাবির কথা উল্লেখ করে রিট পিটিশন করেছিল সেই দিন তিনি যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কার্যালয়ে কোমরপোল ফাজিল মাদরাসার নিয়োগ পরীক্ষায় অবস্থান করছিলেন।