সারাদেশের উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা (এটিইও) টানা দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। সারাদেশের ৪৮০টি উপজেলায় এ পদে কর্মরত আছেন দুই হাজার ৫৯০ জন। তারা আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বেতন পাননি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে থাকেন। সে কারণে তাদের বেতনের সঙ্গে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা ভ্রমণভাতা দেওয়া হয়। করোনার কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয় থেকে গত ৩১ আগস্ট এক আদেশে এটিইওদের এই ভ্রমণভাতা দেওয়া বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি গত মার্চ থেকে নেওয়া ভ্রমণভাতা ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। আকস্মিক এ নির্দেশের পর বিব্রত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ভাতা ছাড়ের জন্য সিএজি কার্যালয়ের সঙ্গে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় আগস্ট থেকে এই কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, টানা দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্মূল্যের বাজারে সংকটে পড়েছেন কর্মকর্তারা। বাধ্য হয়ে অক্টোবরে এসে কোনো কোনো উপজেলায় তারা নির্ধারিত ওই তিন হাজার টাকার ভ্রমণভাতা বাদ দিয়েই আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বেতন-বিল উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দপ্তরে জমা দিয়েছেন। আবার কোনো কোনো উপজেলায় কর্মকর্তারা ভ্রমণভাতাসহ বেতন-বিল জমা দিয়েছেন। কোথাও কোথাও এখনও বেতন-বিল জমাই দেননি এটিইওরা। শেষের এই দলের সংখ্যাই বেশি। এতে দেশজুড়ে তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে বড় ধরনের তালগোল পাকিয়ে গেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছে, ভ্রমণভাতাসহ বেতন-বিল ছাড়ের জন্য অর্থ বিভাগ ও সিএজি অফিসের সঙ্গে দেন-দরবার চালানো হচ্ছে। এ মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো, বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হলেও উন্নয়নমূলক ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বিদ্যালয়গুলোতে চলমান। উন্নয়নমূলক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকি করতে এটিইওদের প্রতিদিনই বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। তাই এ কর্মকর্তাদের ভ্রমণভাতা বন্ধ করা ঠিক হয়নি।
এ সংকটের বিষয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখার উপসচিব আক্তারুন্নাহার একই মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাব ও অর্থ কর্মকর্তা নাশিদ নওয়াজেসের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে বলা হয়, এটিইওরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক মাঠ পর্যায়ে সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পালন করে থাকেন। তারা প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের ২১ জুনের ১৯৩ সংখ্যক স্মারক মোতাবেক নির্ধারিত ভ্রমণভাতা তিন হাজার টাকা পেয়ে আসছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালগুলোতে শ্রেণি পাঠ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি চালু রয়েছে।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, ভ্রমণভাতা তাদের প্রাপ্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই এ ভাতা তারা পান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি অর্থ বিভাগ ও সিএজি দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।