দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেবসহ গ্রেপ্তার ৩ - দৈনিকশিক্ষা

দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেবসহ গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রশ্নফাঁসসহ নানা দুর্নীতির দায়ে শিক্ষামন্ত্রীর (পিও) মো. মোতালেব হোসেন ও অপর কর্মচারি মো: নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। একই সঙ্গে নিখোঁজ থাকা লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনও গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, লেকহেড গ্রামার স্কুল চালুর ব্যবস্থা করতে শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেব এবং উচ্চমান সহকারী নাসিরকে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা ঘুষ দেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক মতিন। বিষয়টি জানতে পেরে অনুসন্ধান চালায় পুলিশ। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রিসিভ ও ডেসপাস শাখার উচ্চমান সহকারী মো. নাসির উদ্দিনকে শনিবার রাত ৮টার দিকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরে মোতালেব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর এক অভিযানে লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হোসেন মতিনকেও গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি সূত্র জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ মোতালেব ও নাসিরের বিরুদ্ধে।

রাতে ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২১শে জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের  উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ সূত্র ধরে মোতালেব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মন্ত্রী জানেন না মোতালেব দুর্নীতিবাজ কি-না: শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেব হোসেন দুর্নীতিবাজ কিনা তা জানেন না শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দুর্নীতির অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মোতালেব হোসেনকে গ্রেফতারের পর এ নিয়ে জানতে চাইলে রোববার (২১ জানুয়ারি) রাতে শিক্ষামন্ত্রী এক সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানান। তিনি আরও জানান, ‘যদি কারও দুর্নীতি থাকে, অন্যায় থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। পুলিশ যা করার তা-ই করবে। আমি এখনও জানি না, তারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হয়েছে কিনা।’ এ বিষয়ে এর বেশি কমেন্ট করবেন না বলেও জানান মন্ত্রী।

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটি টাকার বিনিময়ে ভুয়া সনদকে মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িতকরণ, দুর্নীতিগ্রস্থ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের অনুমতি দেয়া, ক্যামব্রিয়ানসহ কয়েকটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে একাডেমিক স্বীকৃতি ও শাখা অনুমোদন ও পছন্দমতো জিপিএ ফাইভ পাইয়ে দেয়াসহ নানা অনিয়মে লিপ্ত একটি চক্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এই মোতালেব ও নাসির।  সরকারি কলেজ  ও স্কুল শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বদলি এবং বেসরকারি শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিও টাকার বিনিময়ে করে থাকে এই চক্রটি।

মন্ত্রণালয়াধীন একটি প্রকল্পের অস্থায়ী পিওন হলেও নিজেকে মন্ত্রণালয়ের পিওন পরিচয় দিয়ে পুরান ঢাকায় কোটিপতি পরিবারে আত্মীয়তা করেন নাসির। নাসিরের ভায়রা জুলহাসের হাতে ক্যামেরা হাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রীর পিও মো. মোতালেব হোসেনকে রাজধানীর বসিলা এলাকা থেকে কয়েক ব্যক্তি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। মোতালেব তাঁর নির্মাণাধীন বহুতল বাড়ির কাজ তদারক করতে গিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে ওই দিন হাজারীবাগ থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

একই দিন রাজধানীর গুলশানের লেকহেড গ্রামার স্কুলের পরিচালক খালেক হোসেন মতিন নিখোঁজ হন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে কর্মরত উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন নিখোঁজ হন। তিনি খিলক্ষেত এলাকার লেকসিটি কনকর্ডে থাকতেন।

খালেদ হাসান মতিনকে ‘তুলে নেওয়ার’ অভিযোগে থানায় করা জিডি বলা হয়েছে, শনিবার বিকাল ৪টার দিকে গুলশানে তার স্কুলের সামনে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে পাশে থাকা একটি মাইক্রোবাসে তাদের সঙ্গে ওঠেন মতিন। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে গত নভেম্বরে এই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ করে স্কুলটি চালুর নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি নাসিরের বিরুদ্ধে এমপিও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

অপরদিকে কয়েকবছর আগে টাইপিস্ট হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পেয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান মোতালেব। ঝালকাঠী জেলার নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের হতদরিদ্র এক কৃষকের ছেলে মোতালেব। রাজধানীর বছিলায় ছয়তলা আলিশান বাড়ী তৈরি করছিলেন মোতালেব।

এই তিনজনের মধ্যে মোতালেবকে বসিলা থেকে এবং খালেদকে গুলশান থেকে শনিবার বিকেলে কয়েকজন ব্যক্তি তুলে নিয়ে যায় বলে তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়। আর বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখান থেকে বেরোনোর পর থেকে নাসিরের খোঁজ মিলছিল না বলে তাঁর পরিবার জানিয়েছিল।

সম্প্রতি রাজধানীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার বাসায় গিয়ে অপরিচিত লোকজন খোঁজখবর নেয়। এসব ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিখোঁজ মোতালেব ও নাসিরকে যেকোনো মূল্যে উদ্ধারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের উদ্ধারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই ঘটনার মধ্যে সংযোগ আছে নাকি পৃথক ঘটনা—সেটাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’

মোতালেবের ভাই শাহাবুদ্দিন শনিবার সন্ধ্যায় হাজারীবাগ থানায় ভাই নিখোঁজ জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ওই দিনই (২০ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে মোতালেবের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘ধারণা করছি ডিবি পরিচয়ে কেউ আমার বড় ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহাবুদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বসিলা এলাকায় গত বছর থেকে ছয়তলা একটি বাড়ি নির্মাণ করছিলেন তাঁর ভাই। শনিবার বিকেলে তিনি স্যানিটারির কিছু জিনিসপত্র কিনে দিতে সেখানে আসেন। ওই সময় বাড়ির নিচে অপেক্ষা করছিলেন তিন ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাস ও একটি কালো রঙের প্রাইভেট কার ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মোতালেব নিচে নামার পর তিন ব্যক্তি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন আপনার নাম কি মোতালেব? পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁরা বাড়ি ভাড়া নেবেন বলে বাড়ি দেখতে চান। তিনি তাঁদের পরে আসতে বললেও তাঁরা বাড়ি দেখতে চান। অগত্যা ভাতিজা শাহাদাতকে বাসা দেখানোর দায়িত্ব দিলেও তাঁরা মোতালেবকে বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য জোর করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভাতিজাসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। তখন তাঁরা নিজেদের প্রশাসন ও ডিবির লোক বলে পরিচয় দেন। এরপর তাঁকে প্রাইভেট কারে তুলে গাড়ি ছেড়ে দেন। সাদা মাইক্রোবাস ওই গাড়ির পেছনে যেতে থাকে। ভাতিজা সঙ্গে সঙ্গে মোতালেবের মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এলাকায় কারো সঙ্গে আমার ভাইয়ের কোনো শত্রুতা ছিল না।’

এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানার ওসি মীর আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিডির পর আমরা ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি বাড়ি নির্মাণ নিয়ে মোতালেবের সঙ্গে কারো কোনো ঝামেলা ছিল না। তাঁর নিখোঁজের বিষয়ে এখনো কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে বনানী থেকে নাসির উদ্দিন (৫৫) নামের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মী নিখোঁজ হন বলে জিডি করে জানান তাঁর শ্বশুর আবদুল মান্নান খান। নাসির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রহণ ও বিতরণ শাখা’র উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের যুগ্ম সম্পাদকও। জিডিতে অভিযোগ করা হয়, নাসির উদ্দিন কনকর্ড লেকসিটির বৈকালী ভবনের বাসা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বের হন। দুপুরে তাঁর স্ত্রী নিশাত জাহানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। বিকেল ৩টা থেকে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। গতকাল রাতে তাঁকেও গ্রেপ্তার দেখায় ডিবি।

গুলশানের লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনেরও ‘খোঁজ’ মিলছে না জানিয়ে শনিবার একটি জিডি করা হয়। গুলশান থানায় করা এই জিডিতে তাঁর অফিসের স্টাফ ইদ্রিস আলী অভিযোগ করেন, খালেদ বিকেল ৪টায় গুলশান-১-এর ১৩৫ নম্বর রোডে অবস্থিত লেকহেড গ্রামার স্কুলের সামনে থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন। তাঁকেও রাতে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039539337158203