দেশের মানুষের গড় আয়ু ও শিক্ষার হার বেড়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছরে। এদিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে বাংলাদেশ। এছাড়া দেশের ১৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিসটিকস-২০১৮’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এ জরিপটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে বুধবার (১২ জুন) এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিবিএসের মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৩ বছর। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ৮ ও নারীর ৭৩ দশমিক ৮ বছর।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গড় আয়ুর দিক থেকে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে শুধু শ্রীলংকা। দেশটির মানুষের গড় আয়ু ৭৫ বছর। এছাড়া এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের জনগণের গড় আয়ু ৬৪ বছর, ভুটানের ৭১, ভারতের ৬৯, নেপালের ৭১ ও পাকিস্তানের ৬৭ বছর।
অন্যদিকে এক বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারের (ইনফ্যান্ট মরটালিটি রেট বা আইএমআর) দিক থেকেও বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে আইএমআর প্রতি হাজারে ২২ জন। আফগানিস্তানে এ হার ৫২ জন। এছাড়া ভুটানের ২৭, ভারতের ৩২, নেপালের ২৮ ও পাকিস্তানের ৬১ জন। এক্ষেত্রেও দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে শ্রীলংকা। দেশটিতে শিশু মৃত্যুর বার্ষিক হার প্রতি হাজারে আটজন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে একেএম আশরাফুল হক জানান, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে সারা দেশের ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এ নমুনা এলাকায় পরিবারের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৩টি, যা আগেরবারের চেয়ে অনেক বেশি। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাক্কলিত হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ও নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ২৭ লাখ জন। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমান ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ। হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বিবিএসের তথ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন তাদের তথ্য বিশ্বাস করে। বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। এটি সরকারের কার্যক্রমের ফসল। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। ফলে গড় আয়ু বাড়ছে। বিবিএসকে আরও বেশি ক্রেডিবিলিটি ধরে রাখতে হবে। তথ্যের বিষয়ে মানুষকে আরও বেশি আস্থায় আনতে হবে। সামনের দিনে বিবিএসকে আরও শক্তিশালী করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন ছাড়াও বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, বিবিএসের তথ্যে আর্থসামাজিক উন্নয়নের যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল। জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে বিধায় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন মানুষ অনেক বেশি সুচিকিৎসা পাচ্ছে। সুশিক্ষাও পাচ্ছে। দেশ যে উন্নত হচ্ছে, গড় আয়ু বৃদ্ধির মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
শিক্ষার হার: ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ ও এর বেশি বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষার হার দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশে। এর মধ্যে পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৭৬ দশমিক ৭ শতাংশ। নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ৭১ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয়ভাবে শিক্ষার হার ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। এ হিসাবে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার হার বেড়েছে। সাত বছর ও এর বেশি বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে সাক্ষরতার হার গড় ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এ অংশের সাক্ষরতার হার ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর।
জন্মনিয়ন্ত্রণ: মানুষের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার ছিল ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামে এর হার ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ ও শহরে ৬৪ শতাংশ। এছাড়া আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ।
মাতৃমৃত্যু: মাতৃমৃত্যুর হার ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নেমে এসেছে প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৬৯ জনে, যা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ১ দশমিক ৭২ জন।
পরিবার প্রধান: দেশে পুরুষ প্রধান পরিবারের হার ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বাকি ১৪ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার প্রধান নারী।
বিদ্যুৎ ও পানি সুবিধা: দেশের ৯০ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এ হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া ট্যাপ ও নলকূপের পানি ব্যবহার করে ৯৮ শতাংশ পরিবার। স্যানিটারি শৌচাগার ব্যবহার করে ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার।