আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে যাচ্ছেন না শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকায় ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গতকাল শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দৈনিক শিক্ষায় ‘আহছানউল্লাহর ভারপ্রাপ্ত ভিসি স্বাক্ষরিত অকার্যকর সনদের কনভোকেশন রোববার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আসে। প্রতিবেদনে ভারপ্রাপ্ত ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির যাবতীয় দুর্বল তথ্য মন্ত্রীর কাছে গোপন করার কথা প্রকাশ হয়। এরপর সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সমাবর্তন বাতিল করার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। খবর একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের।
আরও পড়ুন: আহছানউল্লাহর ভারপ্রাপ্ত ভিসি স্বাক্ষরিত অকার্যকর সনদের কনভোকেশন রোববার
আহছানউল্লাহর দুই শিক্ষকের পর্ন ভিডিও, একজনকে তালাক
এদিকে দৈনিক শিক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশের পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্র্যাজুয়েটরা। তারা আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে চান তাদের সাথে কেন এমন প্রতারণা করার আয়োজন করা হয়। সমাবর্তন উপলক্ষে গ্র্যাজুয়েটদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়া হয়।
জানা যায়, চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি-প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নেই বেসরকারি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ভারপ্রাপ্ত বা অনিয়মিত ভিসি কর্তৃক স্বাক্ষরিত অকার্যকর মূল সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য প্রায় আড়াইহাজার গ্র্যাজুয়েটকে ডাকা হয়েছিল ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ১১তম কনভোকেশনে। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত না হলে ভিসি-প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষরা অবৈধ বা বিধি মোতাবেক নিযুক্ত নন। আর ভারপ্রাপ্ত ভিসি থাকা অবস্থায় কনভোকেশন করতে পারেন না এবং মূল সনদে স্বাক্ষর করতে পারেন না।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: সোহরাব হোসাইন শনিবার রাতে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘সমাবর্তনটি স্থগিত করা হয়েছে। অনেক আগে তারা সমাবর্তন করার অনুমোদন চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাদের ভিসি ভারপ্রাপ্ত এ অবস্থায় তাদের উচিত ছিল কনভোকেশনটি না করা। তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ধারাটি জানতেন। চ্যান্সেলর অনুমোদিত ভিসি আসা পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করা উচিত ছিল।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলমের চ্যান্সেলর কর্তৃক ভিসি নিযুক্ত হওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, তিনি বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের। আর বিধান অনুযায়ী এই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রযুক্তি অথবা বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের অধ্যাপককে ভিসি নিয়োগ করতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই বিধান জেনেই ভারপ্রাপ্ত ভিসি কাজী শরিফুল গং তড়িঘড়ি কনভোকেশন ডেকেছিলেন। বিধান অনুযায়ী কনভোকেশনের দিনে যিনি ভিসি থাকবেন তিনিই মূল সনদে স্বাক্ষর করবেন। সেই হিসেবে ভারপ্রাপ্ত ভিসি কর্তৃক স্বাক্ষরিত সনদ নিতে হতো প্রায় আড়াইহাজার গ্র্যাজুয়েটকে। এই সনদগুলো অবৈধ হতো এবং এগুলো বাতিল করে নিয়মিত ভিসি নিয়োগ হলে তাকে দিয়ে ফের সনদগুলোতে স্বাক্ষর করাতে হতো। কনভোকেশন বাতিল হওয়ায় প্রতারণার হাত থেকে বেঁচে গেল সাবেক শিক্ষার্থীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত সর্বশেষ ভিসি অধ্যাপক এম এম সফিউল্লাহর মেয়াদ শেষ হয় গত আগস্টে। তিনি বুয়েটেরও সাবেক ভিসি ছিলেন। ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ারও অনেক আগে প্রোভিসির মেয়াদ শেষ হয়। তখন প্রতিষ্ঠানটির দু্ইবারের কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. কাজী শরিফুল আলমকে প্রোভিসির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি একই সাথে প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন কয়েকমাস। চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হয় গত মে মাসে। আগস্টে ভিসির পদটি শূন্য হলে কাজী শরিফুল আলম মুখে মুখে ট্রোজারারের পদ ছেড়ে দেন। অপর একজনকে নামমাত্র নিয়োগও দেন। তাকে বসার জন্য কোনও কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে জানায়, কাজী শরিফুল অদ্যাবধি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ফাইল সই করেন এবং প্রায় তিনলাখ টাকা বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নেন।
এদিকে, রাতারাতি শরিফুলকে ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব পালনের জন্য একটা আদেশ দেন তারই আপন ভাই এবং আহসান আহছানিয়া মিশন ট্রাস্টের সভাপতি ও আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল আলম। মোটকথা, বিশ্ববিদ্যালয়টির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকার নিযুক্ত কেউ নেই। যারা আছেন তারা থাকা না থাকা সমান কথা।
জানা যায়, গত আগস্টে নিয়মিত ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত ভিসি পদে আছেন ড. কাজী শরিফুল আলম। বিধান অনুযায়ী নতুন ভিসির জন্য তিনজনের নাম পাঠাতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে। কিন্তু তা না করে তড়িঘড়ি কনভোকেশন আয়োজন করেছিলেন। ২৭ অক্টোবর (রোববার) কনভোকেশনে উপস্থিত থাকার কথা ছিল শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন বাণিজ্যমেলার মাঠে এদিন বিকেল ৩টায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
বিধান অনুযায়ী শিক্ষামন্ত্রীকে কনভোকেশনের যাবতীয় তথ্য জানানোর দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার। কিন্তু একজন বিতর্কিত অতিরিক্ত সচিব ও একজন উপসচিব এবং একজন কর্মচারীর যোগসাজশে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে কনভোকেশনের পাঠানোর আয়োজন করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রোভিশনাল সার্টিফিকেট নিয়ে নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।